হিরো আলমের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২৭৫ গুণ
পাঁচ বছর আগে আলোচিত-সমালোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের স্ত্রীর মাত্র ১ ভরি স্বর্ণ ছিল। যার দাম উল্লেখ করা হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার নামে সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫৫ লাখ টাকার। এই হিসাবে, পাঁচ বছরে হিরো আলমের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২৭৫ গুণ। এর বাইরে তাঁর রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণও।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে এবার ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন হিরো আলম। বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে তিনি মাঠে থাকবেন। পাঁচ বছর আগে একই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করেছিলেন। ওই সময় জমা দেওয়া হলফনামায় তার স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণ থাকার কথা জানান।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পাঁচ বছর আগে নিজেকে অভিনেতা ঘোষণা করলেও হিরো আলম এবার নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিরো আলম তার আয়ের উৎস, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলে ৮ লাখ ২৬ হাজার টাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। দ্বাদশে তিনি তার উৎস, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬০ লাখ ৬ হাজার টাকার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা ১০ ভরি স্বর্ণ, এবং নিজ নামে থাকা জমির দামের কথা উল্লেখ করেননি।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া এবারের হলফনামা অনুযায়ী, হিরো আলম কৃষি খাত থেকে আয় করেন ৬ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগেও এ খাতে একই পরিমাণ আয় করতেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে অভিনয় করে বছরে হিরো আলম আয় করতেন ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় হিরো আলম ব্যবসার কথা জানিয়েছেন। ব্যবসা থেকে তিনি আয় করেন ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ, অভিনয় থেকে ব্যবসা করতে এসে হিরো আলম ২২ হাজার টাকা বেশি আয় করছেন।
৮৭ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল থাকার কথা পাঁচ বছর আগে জানিয়েছিলেন হিরো আলম। কিন্তু এবারের হলফনামা বলছে, সেই মোটরসাইকেল তার কাছে নেই। অর্থাৎ হলফনামায় এর কোনো উল্লেখ নেই। কোনো গাড়ি থাকার কথাও বলা হয়নি।
অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর আগে হিরো আলমের ব্যাংকে জমা ছিল ১ হাজার টাকা। পাঁচ বছর পরে এসে সেই টাকার পরিমাণ বেড়ে ৩০ হাজার হয়েছে। পাঁচ বছর আগে হিরো আলমের ১ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল। এখনো তাই-ই আছে। আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো তিনি দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র ব্যবহার করেন।
তবে পাঁচ বছরে হিরো আলমের স্ত্রীর স্বর্ণের পরিমাণ বেড়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা মূল্যের এক ভরি স্বর্ণ থাকলেও এখন তাঁর স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে বলে হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এসব স্বর্ণ বৈবাহিক সূত্রে তাঁর স্ত্রী পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
একইসাথে হিরো আলমের স্ত্রীর নামে আগে ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রে কোনো টাকা না থাকলেও এবার তার নামে ৫৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে এবারে হিরো আলম কৃষি জমির পরিমাণ আধা কাঠার কথা উল্লেখ করেছেন। এই জমি তিনি পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন। অকৃষি জমি রয়েছে ৯ শতক। তবে এসব সম্পত্তির কোনো আর্থিক মূল্য তিনি উল্লেখ করেননি।
পাঁচ বছর আগে ২১ শতক অকৃষি জমি থাকার কথা জানিয়েছিলে হিরো আলম। এই জমির মূল্য ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জানিয়েছিলেন। এর বাহিরে তখন তার কোনো জমি ছিল না।
এসব বিষয় নিয়ে হিরো আলম বরাবরই বলে আসছেন, 'আমি ঋণ খেলাপি নই। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার কোনো গাড়িও নেই।'
এর আগে চলতি বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়েও পরাজিত হন তিনি। হারান জামানত। এ বছরেই বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান হিরো আলম। একই দিনে অনুষ্ঠিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। এই আসনে তিনি জামানত হারান।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন হিরো আলম। যদিও পরে 'অনিয়মের অভিযোগ তুলে' নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।
হিরো আলমের ২০২৩ সালের হলফনামা