হার দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শুরু বাংলাদেশের
বল হাতে দারুণ শুরু করেও সেই পথে থাকা হয়নি বাংলাদেশের। তিন দফায় হানা দেয় বৃষ্টি, এরপর শুরু হয় টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াংয়ের ব্যাটিং শো। খাদের কিনার থেকে দলকে টেনে তুলে এই দুই ব্যাটসম্যান খেলেন অসাধারণ দুটি ইনিংস, তাতে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। জবাবে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যাটসম্যান ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি, তাই লক্ষ্যেও পৌঁছানো হয়নি তাদের।
রোববার ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ড বৃষ্টির মাঝে মাঝে তিন দফায় ব্যাটিং করে ৩০ ওভারে ২৩৯ রান তোলে। ১৯.২ ওভার শেষে ২ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১০৮ রান। ল্যাথাম ও ইয়াংয়ের ব্যাটে শেষের ১০.৪ ওভারে ১৩১ রান পায় কিউইরা।
ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৩০ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান। এনামুল হক বিজয়, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেনদের লড়াই যথেষ্ট হয়নি, আরও কয়েকজন থিতু হয়েও পারেননি দলকে এগিয়ে নিতে। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াই কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে। ২০০ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বল হাতে খরুচে থাকা সৌম্য সরকার ব্যাট হাতেও হতাশ করেন। ইনিংসের চতুর্থ বলে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। শুরুর চাপ কাটিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন বিজয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দলীয় ৪৭ রানে ভাঙে এই জুটি। সুইপ করতে গিয়ে ইশ সোধির বলে বোল্ড হন ১৩ বলে ২টি চারে ১৫ রান করা বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
এরপরও চাপ বুঝতে হয়নি সফরকারীদের, তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন বিজয় ও লিটন কুমার দাস। অবশ্য তারাও পারেননি জয়ের আশা বাঁচিয়ে ব্যাটিংয় করে যেতে। দলীয় ৮০ রানে থামেন বিজয়। জশ ক্লার্কসনের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৯ বলে ৫টি চারে ৪৩ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার, বাংলাদেশের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
কিছুক্ষণ পর আউট হন সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা লিটন। চার নম্বরে নামা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২২ রান করেন। তার বিদায়ে জয়ের পথ কঠিন হয় বাংলাদেশের, কিছুক্ষণ পরই পথটি কঠিতম হয়ে ওঠে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে। এরপরও অবশ্য দলকে ঠিক পথে রাখেন আফিফ হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৩৮ বলে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা।
২৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করে হৃদয় আউট হলে জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৬ রান পরই আফিফের বিদায়ে হার একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে ওঠে তাদের। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন। এরপর মিরাজ কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। ২১ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের অ্যাডাম মিলনে, ইশ সোধি ও জশ ক্লার্কসন ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান জ্যাকব ডাফি, উইলিয়াম ও'রোক ও রাচিন রবীন্দ্র।
এর আগে বল হাতে দুর্বার শুরু হয় বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই কিউইদের দুই উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলসকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার। কিন্তু এরপর থেকে থেকে বৃষ্টির বিরতি ও ইয়াং-ল্যাথামের হার না মানা মনোভাব; সব মিলিয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। কিউইদের পরের ৫টি উইকেট যে পড়েছে, তা একেবারে শেষ দিকে। তৃতীয় উইকেটে ১৪৫ বলে ১৭১ রানের জুটি গড়েন ল্যাথাম ও ইয়াং। বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে এটাই তাদের সেরা জুটি।
ঠিক সময়েই টস হয়, কিন্তু বৃষ্টির হানায় ম্যাচ ৪টায় শুরু হয়নি। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা, কমানো হয় ৪ ওভার। ব্যাট হাতে নেমেই বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা। দারুণ দুই ডেলিভারিতে রাচিন ও নিকোলসকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। দিকহারা দলের হাল ধরেন ল্যাথাম-ইয়াং, সহজেই চাপ কাটিয়ে তোলেন তারা। ১৩.৫ ওভারে ২ উইকেটে কিউইদের সংগ্রহ যখন ৬৩ রান, তখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়। এবার কমানো হয় ৬ ওভার, ম্যাচ নেমে আসে ৪০ ওভারে।
পরের দফায় বেশিক্ষণ খেলা হয়নি, ১৯.২ ওভারে তৃতীয় দফায় বৃষ্টি শুরু হয়। এবার ১০ ওভার কমানো হয়। ৩০ ওভারের বাকি তখন ১০.৪ ওভার। হিসাবটা মিলিয়ে দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন ল্যাথাম-ইয়াং। মেহেদী হাসান মিরাজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৭৭ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯২ রান করেন। রান আউটে কাটা পড়া ইয়াং ৮৪ বলে ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৪ রানেল ঝলমলে ইনিংস খেলেন। ১১ বলে ২০ রান করেন চাপম্যান। এই তিনজনই দুই অঙ্কের রান করেন। কিউইদের দুজন শূন্য ও তিনজন ১ রান করে করেন। শেষ দিকে তাদের চারজন ব্যাটসম্যান রানআউট হন।