সহজ জয়ে সিরিজে সমতা আনলো বাংলাদেশ
প্রথম ওয়ানডেতে অমন অবিশ্বাস্য পতনে শঙ্কাই জেগেছিল। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেওয়া আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার হয়ে উঠেছিলেন রীতিমতো ভীতির নাম। এর মাঝেই সিরিজ বাঁচানোর লড়াই, ভুল করার সুযোগ ছিল না নাজুমল হোসেন শান্তর দলের। এবার অবশ্য ছন্দময় বাংলাদেশেরই দেখা মিললো। সহজ জয়ে সিরিজে সমতা আনলো তারা।
শনিবার দুবাইয়ের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সব ফরম্যাট মিলিয়ে সাত ম্যাচ পর জিতলো তারা। সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগামী ১১ নভেম্বর একই মাঠে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ক্রিকেট বিশ্বে নতুন হুমকি হয়ে ওঠা আফগানদের বিপক্ষে ১৮ ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের ১১তম জয়। বাকি সাত ম্যাচে জিতেছে আফগানিস্তান।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হওয়া শান্ত পান হাফ সেঞ্চুরির দেখা। গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন সৌম্য সরকার, অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক ও নাসুম আহমেদ। ছোট ইনিংস খেলেদ তানজিদ হাসান তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এদের ব্যাটে ৭ উইকেটে ২৫২ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানদের বোলিংয়ের সামনে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ১৮ রানে ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারালেও গুছিয়ে নিয়েছিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়েন সাদিকুল্লাহ অতল ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি করা রহমত শাহ। দ্বিতীয় উইকেটেও ৪৮ রানের জুটি পায় দলটি, এই জুটি গড়েন রহমত ও আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি। কিন্তু এই জুটি ভাঙারসহ ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আফগানিস্তান আর ঠিক পথে ফিরতে পারেনি।
দেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক রহমত ৭৬ বলে ৫টি চারে ৫২ রান করেন, এই ফরম্যাটে এটা তার ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন তরুণ সাদিকুল্লাহ, বাঁহাতি এই ওপেনার ৫১ রানের ইনিংসে ৫টি চার মারেন। এ ছাড়া হাশমতউল্লাহ ১৭, গুলবাদিন নাইব ২৬, মোহাম্মদ নবি ১৭ ও রশিদ খান ১৪ রান করেন। রিশাদ হোসেনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ৮.৩ ওভারে ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। মিরাজ ও মুস্তাফিজ পান ২টি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও শরিফুল।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে দাপুটে শুরুই পায়। সৌম্য ধীর-স্থির থাকলেও জাকির চড়াও হন। যদিও এভাবে বেশি সময় টিকতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। দলের প্রথম ২৮ রানের মধ্যে ২২ রান করা জাকির আল্লাহ মোহাম্মদ জাগানফারের শিকারে পরিণত হন। ১৭ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি।
দ্বিতীয় জুটিতে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সৌম্য ও শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৩ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪৯ বলে ২টি করে ৪ ও ছক্কায় ৩৫ রান করা সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। যদিও বেঁচে যেতে পারতেন বাঁহাতি এই ওপেনার, কিন্তু রিভিউ না নেওয়ায় সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের আবেদনে সাড়া দিয়ে সৌম্যকে এলবিডব্লিউতে আউট আম্পায়ার। শান্তর সঙ্গে সৌম্য আলোচনা করেন, তবে অধিনায়ক রিভিউ নেওয়ায় আগ্রহ দেখাননি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলের বেশিরভাগ অংশ লাইনের বাইরে পিচ করেছে। রিভিউ নিলেই বাঁচতে পারতের সৌম্য।
সৌম্যর বিদায়ে পর তৃতীয় উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ৮৩ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন শান্ত। ২২ রান করে মিরাজ ফিরলে উইকেট যান হৃদয়। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান টিকতে পারেননি বেশি সময়, ১৬ বলে ১১ রান করে থামেন তিনি। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকলেও শান্ত নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন, নেতার মতোই খেলে যেতে থাকেন।
অবশ্য এরপর তিনিও ফেরেন, দলীয় ১৮৩ রানে মাথায় নাঙ্গেলিয়া খারোতের শিকারে পরিণত হন। এর আগে ১১৯ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৭৬ রান করেন শান্ত। এর রান পরই খারোতের তৃতীয় শিকার মাহমুদউল্লাহ, ৯ বলে ৩ রান করেন তিনি। ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ-ই চাপে পড়া বাংলাদেশকে ঠিক পথে রাখেন জাকের ও নাসুম। সপ্তম উইকেটে ৪১ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন তারা।
নাসুম ২৪ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা জাকের শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালান, শেষ বলে মারেন ছক্কা। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ২৭ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ইনিংসের দ্বিতীয় সেরা ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানিস্তানের খারোতে নেন ৩টি উইকেট। এ ছাড়া গাজানফার ও রশিদ পান ২টি করে উইকেট।