জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার কমেছে
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ এবং বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকারের অর্থ ব্যয় কমেছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের ১৭.০৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ।
গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে।
গত অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ১৮.৪১ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের বাস্তবায়ন হার ছিল ১৮.৬১ শতাংশ।
এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ১৬.৮৪ শতাংশ।
আএমইডির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এডিপির অর্থ ব্যয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে, বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকা সড়ক, রেল, নৌ, পানি সম্পদসহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্পগুলোতে অর্থবছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়ন গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে এ সময়ে অনেক প্রকল্পের উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু, বাস্তবায়নের শুরুর দিকে থাকা প্রকল্প এবং বাস্তবায়নের মাঝ পথে থাকা প্রকল্পগুলোয়– সেইভাবে বাস্তবায়ন গতি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। মূলত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের বিদেশ থেকে পণ্য ক্রয় কাজ আটকে রয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং নির্বাচন কেন্দ্রীক অস্থিরতায় অনেক ঠিকাদার কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। এ কারণে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তার আগের বছরগুলোর তুলনায় উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থব্যয় বেড়েছিল।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২০.১১ শতাংশ, যা এর আগের দুই বছর ২০১৬-১৭ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১৯.১৩ এবং ১৬.৮৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) এর সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, 'নির্বাচনের বছরে সরকার তড়িঘড়ি করে কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য বাস্তবায়ন গতি বাড়ায়। কিন্তু, নির্বাচনের বছরে বেশিরভাগ প্রকল্পেরই বাস্তবায়ন কাজে গতি কম থাকে। বিল নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে কিছু অশ্চিয়তা থাকে। তবে চলতি বছরে অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
এদিকে আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে অর্থ ব্যয় বাড়লেও– কমেছে সরকারি তহবিলের ব্যয়।
অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ থেকে অর্থ ব্যয়ের হার ১৬.১৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১৭.৯৩ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের ১৯.১৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯.০৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিলের বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ১৩.২৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৯.৩৭ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্যমতে, নভম্বের সময়ে ২০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে, এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৪.১২ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ২০.২১ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ২৬.৯৬ শতাংশ, সেতু বিভাগ ২০.০৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২৭শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ২৫.৫৬ শতাংশ।
২০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে আছে– মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৯.৮৫ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১২.০৯ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৪.৫৯ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১০.৬৪ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ শতাংশ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ৬.৬৬ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৮.১৮ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৮.২১ শতাংশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ১৫.২৭ শতাংশ।