সিলেটের কিনব্রিজ দিয়ে আর গাড়ি চলবে না
দুই কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ। তবে সংস্কার শেষে জানা গেল, এই সেতু দিয়ে আর গাড়ি চলাচল করবে না। কেবল পায়ে হেঁটে পারাপার হওয়া যাবে সেতুটি।
চারমাসের মেরামতকাজ শেষে গত বৃহস্পতিবার সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। ওইদিন থেকেই সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা রয়েছে। গাড়ি চলাচল ঠেকাতে সেতুর দুই পাশে প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে একাধিক লোহার খুঁটি।
সিলেটের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হলেও প্রায় শতবর্ষ পুরনো এই সেতু যান চলাচলের উপযোগী করা যায়নি। ভারি যানবাহন চলাচল করলে এই সেতু আবার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে ও ঐতিহ্যবাহী সেতুটি টিকিয়ে রাখতেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই পায়ে হেঁটে সেতুটি পারাপার হতে পারবে।
সওজ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে কিনব্রিজ হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ পদচারী সেতু।
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট সিটি করপোরেশন এবং সওজ বিভাগ যৌথভাবে সেতুটির সংস্কার করে। সে সময় তারা সেতুটিকে পদচারী-সেতুতে রূপান্তর করতে চেয়েছিল। এজন্য সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধও করে দেয় তারা। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের দাবির মুখে ৫২ দিন পর আবারও যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এরপর ২০২১ সালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই ওই বছরের জুলাই মাসে সেতুটি দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেবল রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
সওজ সূত্রে জানা যায়, সেতুটি সংস্কারের জন্য ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। সেখানে সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেন বিভাগীয় কমিশনার। পরবর্তীকালে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। নানা জটিলতায় কাটিয়ে অর্থ বরাদ্দের দুই বছরের বেশি সময় পর চলতি বছরের ১৭ আগস্ট থেকে এই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করে রেল বিভাগ।
প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, 'সেতুটি সংস্কার করতে গিয়ে দেখা গেছে এটি আর যান চলাচলের উপযোগী করা যাবে না। যান চলাচল করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।'
সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের যোগাযোগের সুবিধার্তে ১৯৩৩ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৩৬ সালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসামের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ করা হয় কিনব্রিজ। লোহা দিয়ে তৈরি এই সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।