করোনাকালেও নিয়োগ পরীক্ষা!
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জারি করা বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে খুলনায় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৫৪টি পদে পরীক্ষা নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
শনিবার খুলনা মহানগরীর তিনটি কেন্দ্রে সহস্রাাধিক প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেন। একই দিন পৃথক স্থানে প্রার্থীদের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়।
এদিকে, করোনা প্রাদুর্ভাবকালে বিভিন্ন স্থানের চাকরি প্রত্যাশিদের পরীক্ষা গ্রহণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতা, চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের অভিভাবকরা।
তারা বলেন, যখন মহানগরীসহ খুলনা জেলায় প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে ও লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে; তখন এ ধরনের পরীক্ষা বা জমায়েত সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এমনকি বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হয়নি। সর্বশেষ গত শনিবার খুলনায় ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরি প্রার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার ৫৪টি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহস্রাধিক প্রার্থী আবেদন করেন। গত ৪ জুন নিয়োগ কমিটির সভায় ২০ জুন প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা আহ্বান করা হয়।
সে অনুযায়ী শনিবার সকাল ১০টায় খুলনা জিলা স্কুল, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা, বিকেল ৪টায় নগরীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দপ্তরে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষার সময় দেওয়া হলেও পরে তা সন্ধ্যা ৭টায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ এড়াতে জেলায় পাবলিক পরিবহন ও যান চলাচল সীমিত থাকায় পরীক্ষার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে বিড়ম্বনায় পড়েন।
রাতে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পাঁচজন, নারী কোঠায় আটজন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোঠায় পাঁচজন, ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী কোঠায় একজন, শারিরীক প্রতিবন্ধী কোঠায় একজন এবং মেধা কোঠায় ৩০ জনকে মনোনীত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলেন, 'সরকারি চাকরি সোনার হরিণ' তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকির মধ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।
পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকরাও ছিলেন আরও বিড়ম্বনায়। থাকা-খাওয়াসহ নানা বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের এমন সিদ্ধান্তে তারা বিপাকে পড়েন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলায় এক প্রকার লকডাউন চলছে। তারমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি। এতে যারা শহরে এলেন তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়লেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক সময়ে করা উচিত ছিল।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, এখন একটি দুর্যোগ চলছে। এ অবস্থায় এ ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ খুব জরুরি বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। যেখানে স্বাস্থ্য দপ্তর বার বার লকডাউন ও আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন; সেখানে খোদ জেলা প্রশাসনের রাত অবধি নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ ভালো বার্তা দেবে না।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আমরা আরও কঠোর লকডাউনের কথা বলছি। সেখানে এমন পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়টি করোনা প্রতিরোধ কমিটিকেও জানানো হয়নি।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করার নির্দেশনা দিয়েছে।
খুলনায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১১ জুন থেকে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য জেলার সব উপজেলা ও মহানগরীতে দোকানপাট, শপিংমল, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধি নিষেধ জারি করা হয়। গত ১০ জুন খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ওই আদেশ জারি করেন।