শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতেই হলো হার্ভার্ডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টকে
অবশেষে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিন গে। দায়িত্ব পালনকালে বেশ কয়েকটি বিতর্কে জড়িয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) এই ঘোষণা দেন তিনি।
মাত্র ছয় মাস আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ক্লাউডিন। তার এই পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হলো।
হার্ভার্ডের ৩৮৮ বছরের ইতিহাসে ক্লাউডিন ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। একইসাথে দ্বিতীয় নারী হিসেবে এই পদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
গাজায় যুদ্ধ ঘিরে সংগঠিত বিক্ষোভ নিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর কংগ্রেসে সাক্ষ্যদানের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পর থেকেই ক্যাম্পাসের ইহুদি গোষ্ঠী ও উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস সদস্যদের পক্ষ থেকে তার ওপর পদত্যাগের একটা চাপ ছিল। একইসাথে গত কয়েক মাসে তার বিরুদ্ধে একাধিক একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
ঠিক কবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ক্লাউডিন। তবে চলমান বিতর্কগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইও, শক্তিশালী দাতা ও কংগ্রেসের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এক্ষেত্রে পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি নেওয়া এতটাই কঠিন ছিল যে, সেটা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয় বলে অভিহিত করেছেন বর্তমান সদ্য বিদায়ী এই প্রেসিডেন্ট।
হার্ভার্ড কমিউনিটির কাছে লেখা এক চিঠিতে ক্লাউডিন বলেন, "ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কিন্তু হার্ভার্ডের প্রতি গভীর ভালোবাসার সাথে আমি জানাচ্ছি যে, আমি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। কর্পোরেশনের সদস্যদের সাথে আলোচনার পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে আমার পদত্যাগ করা উচিত। এতে করে আমাদের সম্প্রদায় এই চ্যালেঞ্জের মুহুর্তটিকে মোকাবিলায় কোনও ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোনিবেশ করতে পারবে।"
ক্লাউডিনের সাথে ঘনিষ্ঠ এমন এক সূত্র সিএনএন-কে জানায়, গত সপ্তাহের শেষের দিকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে গত সোমবার ওয়াশিংটন ফ্রি বীকন এক রিপোর্টে নতুন আরেকটি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তোলে। এক্ষেত্রে আন্দাজ করা যায় যে, নতুন অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার আগেই অবশ্য ক্লাউডিন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) এক চিঠিতে হার্ভার্ড কর্পোরেশন ক্লাউডিন পদত্যাগপত্র 'দুঃখের সাথে' গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি হিসেবে কাজ করা ১১ সদস্যের এই কর্পোরেশনটি বলেছে যে, তিনি 'ব্যক্তিগত ও ক্রমাগত আক্রমণের মুখে অসাধারণ সহনশীলতা দেখিয়েছেন।'
এদিকে প্রভোস্ট ও প্রধান একাডেমিক অফিসারের দায়িত্বে থাকা অ্যালান এম. গারবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছেন। হার্ভার্ড কর্পোরেশন গতকাল (মঙ্গলবার) এক চিঠিতে এমনটা জানিয়েছেন৷
খুব শীঘ্রই নতুন প্রেসিডেন্ট খুঁজে বের করা হবে বলে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে ক্লাউডিন জানান, ফ্যাকাল্টি পদে ফিরে যেয়ে ফের শিক্ষকতা শুরু করবেন তিনি। কেননা এটিই তার সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ।