নির্বাচিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেবে আ.লীগ: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল আবারও নির্বাচিত হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ অগ্রাধিকার দেবে।
'এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার দিকেও মনোযোগ দেবে,' বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচিত হলে তার দল যে বিষয়গুলোর অগ্রাধিকার দেবে, ভাষণে তার রূপরেখা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, রেডিও বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার করা, সাম্প্রদায়িকতা ও সকল ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল করা, দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয় ক্ষমতার আওতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, এবং কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুব সমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাকেও অগ্রাধিকার দেবে।'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী 'গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় না দিতে ও ইন্ধন না জোগাতে' অনুরোধ করেন।
নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন তার সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
'গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের অর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করে। জনগণের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ব্যাপক হারে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপন করেছে।
'বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার যে সুযোগ পাওয়া যাবে তা কার্যকর করা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মোকাবিলা করতে পারবে,' বলেন শেখ হাসিনা।
জনগণের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এ উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবন মান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।'
জনগণের 'ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কারণে বার বার তার ওপর আঘাত' এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, বার বার গ্রেফতার হয়েছি। আমাকে অন্তত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। অবশেষে মানুষের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হই।'
তার সরকারের শাসনামালে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির কথা তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বলেন, 'অর্থনীতির যেকোনো সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎকর্ষ সাধন হয়েছে। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।'
আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।