টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ
কম ভোটার ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা থাকলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববারের (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনে বড় কোনো বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্ররা বেশিরভাগ আসনে জয়ী হয়েছেন।
বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আনুমানিক ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে; তবে এ হার বাড়তে বা কমতে পারে।
বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর বয়কট করা ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের অংশগ্রহণে গত নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে সর্বনিম্ন ভোট ছিল ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের বর্জন করা ওই নির্বাচনে ভোটের হার ছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
দশম ও একাদশ সংসদীয় নির্বাচনেই ব্যাপক সহিংসতা দেখেছে মানুষ। দুটি ভোটের প্রতিটিতেই সহিংসতায় অন্তত ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে প্রাণহানির সংখ্যা একজন।
মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর এক সমর্থককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো 'নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের' দায়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
অনিয়ম ও সহিংসতার জেরে রোববার ১১টি আসনের ২৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া জাল ভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, কেন্দ্রে এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ এনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছেন ২৮ জন প্রার্থী।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সিইসি অবশ্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'প্রশাসন বা পুলিশের আচরণ নিয়ে দু-চারটি ছাড়া কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তাদের বদলি করা হয়েছে।'
এর আগে এদিন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। তারও আগে তিনি জানিয়েছিলেন, আট বিভাগে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয় ভোট গণনা।
ঢাকা এবং দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, ভোলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বার্তাসংস্থা ইউএনবি'র সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সকালে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
দিনের প্রথমার্ধে কুমিল্লা, বাগেরহাট, বরিশাল ও হবিগঞ্জে প্রত্যাশার চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রাজধানীর অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে প্রায় দিনভর দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়।
রোববার সকাল সোয়া ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৫ এবং ঢাকা-১৬ আসনের অন্তত ৩০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সংবাদদাতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজে ভোট দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
'বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। এটি ছোট দেশ হতে পারে, কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। জনগণই আমাদের প্রধান শক্তি। কাজেই কে কী বলল, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না,' ভোট দিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে এসে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জনগণকে ভোট থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের দিন হরতাল ডাকে বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলো।
রোববার 'একতরফা' জাতীয় নির্বাচন বয়কটের জন্য তাদের দলের আহ্বান সফল হয়েছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুল মঈন খান 'ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া'র জন্য ভোটারদের অভিনন্দন জানান।
গুলশানে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, এই ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
'আজকে আমি জনগণকে শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে নয় — যে ৬২টি রাজনৈতিক দল এই প্রহসনের নির্বাচনকে বর্জন করেছে — তাদের সকলের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট জানাই একটি মাত্র কারণে যে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো দিন আপোষ করেনি, এবারও করেনি,' বলেন এই বিএনপি নেতা।
আরেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, তারা আশঙ্কা করছেন নির্বাচনে এনে তাদের কোরবানি দেওয়া হয় কি না।
এই নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। তবে রোববার রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল অনুসারে মাত্র ৫টি দল আসন পেয়েছে।
অবশ্য ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকে 'গণতন্ত্র ও জনগণের বিজয়' বলে অভিহিত করেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য জনগণের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ।