হকার আর যানজট—সিলেট নগরের দুই যন্ত্রণা
বেদখল হয়ে আছে নগরের বেশিরভাগ ফুটপাত। ফুটপাতে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের অনেকাংশও তাদের দখলে। ফলে পথচারীদের হাঁটাচলারও সুযোগ নেই। এছাড়া নগরজুড়েই লেগে থাকছে ভয়াবহ যানজট। হকারদের উপদ্রব আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যানজট আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হকার আর যানজট—এই দুটিই এখন হয়ে উঠেছে সিলেট নগরবাসীর প্রধান যন্ত্রণা। এই দুই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিন দিন যন্ত্রণা আরও তীব্র হচ্ছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক নগরবাসী জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে ফুটপাত হকারদের দখল থেকে মুক্ত করতে ও অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদে কিছু তৎপরতা চালান। তবে এতে খুব একটা সফলতা মেলেনি। গত জুনে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকে হকারদের উপদ্রব আরও বেড়ে যায়।
আর সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর রীতিমতো হকারদের দখলেই চলে গেছে নগরের বেশিরভাগ ফুটপাত ও সড়ক। গত ৭ নভেম্বর দায়িত্ব নেন আনোয়ারুজ্জামান। এরপর হকার উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
জিন্দাবাজারবাজার এলাকায় সড়কের মধ্যে শীতের কাপড় বিক্রি করা ময়েজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই সড়কেই পণ্য নিয়ে বসেছি। এখানে বসার জন্যও অনেককে চাঁদা দিতে হয়।'
তিনি বলেন, কেবল হকারদের কারণে নয়, মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারণেও এই সড়কে যানজট হয়। কারণ এখানকার বেশিরভাগ মার্কেটের পার্কিং প্লেস নেই। মার্কেটে আসা গাড়িগুলো সড়কেই পার্কিং করা হয়। ফলে সব সময় যানজট লেগে থাকে।
এই দুর্ভোগ লাগবে ২০২১ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। ওই বছরের জানুয়ারিতে নগরভবন লাগোয়া লালদিঘির পাড়ের খোলা মাঠে হকারদের জন্য অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। প্রাথমিক অবস্থায় নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয় ওই মার্কেটে।
তবে দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেস্তে গেছে হকার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ। সিটি করপোরেশন নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে আর বসেন না হকাররা। উল্টো নগরের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে রেখেছেন তারা। ফলে দিনভর নগরে লেগে থাকে যানজট।
সিলেট নগর ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, উপশহর, শিবগঞ্জ, মদিনা মার্কেট, সুদিবাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। এসব এলাকায় দিনভর যানজট লেগে থাকে।
নগরবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সড়ক হকারদের দখলে চলে যাওয়া, সড়কের ওপরে গাড়ি পার্কিং, বেশিরভাগ বিপণি বিতানের পার্কিং প্লেস না থাকা এবং সড়কে চলা সংস্কার কাজের কারণে নগরে যানজট এমন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া স্কুল-কলেজ ছুটির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে যানজট লেগে যায়।
সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, হকারদের সিন্ডিকেট আর পুলিশের অসহযোগিতার কারণে পুনর্বাসনের উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের নজরদারি কমে যাওয়ার কারণেও এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সালাউদ্দিন আহমদ নামের সিলেটের একজন বাসিন্দা বলেন, 'পাঁচ বছর আগেও সিলেটে এমন যানজট ছিল না। হঠাৎ করে গত কয়েক বছরে সিলেটে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।'
তিনি বলেন, এই সময়ে সিলেটের সড়কগুলো অনেক প্রশস্ত করা হয়েছে, কিন্তু তাতে যানজট না কমে আরও বেড়েছে। এখনই যানজট নিরসনে পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে সিলেটও ঢাকার মতো স্থবির হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নগরে হকারদের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সাথে আলোচনা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ইনশাল্লাহ আগামী একমাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।'
সিলেটের রাজপথ হকারমুক্ত করতে বা রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছু করা হবে বলে উল্লেখ করেন মেয়র।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রাখী রানী দাস বলেন, 'বর্তমানে সিলেট শহরের যানজটের প্রধান কারণ চলমান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ। সিটি কর্পোরেশন ও সওজের সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য এই সমস্যা আরও এক মাস পোহাতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবু শহরের যানজট ও সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা বাড়তি সদস্য যোগ করেছি।'
হকার সমস্যা প্রসঙ্গে তনি বলেন, 'হকারদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে উচ্ছেদ করেও লাভ হবে না। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।'