৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের নিন্দা বিএনপির
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার ম্যানতিতস্কির বক্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, 'আমরা লক্ষ্য করেছি যে, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার ম্যানতিতস্কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির বক্তব্যকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনে ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং অধিকাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশের জনগণ (বর্তমান) সরকারকে নির্বাচিত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।'
রুশ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা বলতে চাই, তার (রাষ্ট্রদূতের) অযাচিত, অগ্রহণযোগ্য ও আওয়ামীপন্থী বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করেছে।'
এতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন সব বাংলাদেশি নাগরিক তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে নিজ দেশেই পরাধীন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, 'গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।'
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের আশা-আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন। 'সেই অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।'
দলটি বলেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ আশা করে যে, রাশিয়া, ভারত, চীন বা অন্য কোনো দেশ জনগণের প্রবল ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণবিরোধী ও ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনকে অযাচিতভাবে সমর্থন করবে না।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, 'বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। এজন্য বিএনপি রাশিয়াকে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার দৃঢ় সংকল্প ও মহান ত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে।'
এর আগে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার ম্যানতিতস্কি বলেন, আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির অভিযোগ 'বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা'।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সরকার নয়, ভারত, চীন ও রাশিয়ার সরকার বলে বিরোধী দল যে বক্তব্য দিয়েছে তা কারো বিশ্বাস করা উচিত নয়।
বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
দলটির দাবি, জাতিকে ধোঁকা দিতে এবং শেখ হাসিনার অসাংবিধানিক, ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং তার অনুগত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সহায়তার জন্য গত ৭ জানুয়ারি প্রহসনের ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিএনপি উল্লেখ করে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ, সাতটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন বিদেশি পর্যবেক্ষক বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, '৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ায় একটি নতুন ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন বাংলাদেশের জনগণের গণদাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গণতন্ত্রপন্থী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের বঞ্চিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।'