ভবন থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু: ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক ও স্ত্রী কারাগারে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবনের নয়তলা থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক (৫৬) ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের (৪৬) জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে তিন দিনের মধ্যে এ দম্পতিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই সাংবাদিকসহ তার পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
বুধবার সকালে পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মোহাম্মদপুর জোন) আজিজুল হক। ওই গৃহকর্মীর বাবা লুকেশ উরাং (৪০) বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামে।
মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পেনাল কোডের ওই ধারা অনুযায়ী, কারও বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কারণে যদি কেউ মারা যান বা আহত হন, তাহলে সেই ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বছর দুয়েক আগে প্রীতিকে ওই বাসায় কাজে দেন তার বাবা লুকেশ। এই সময়ে তিনিও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি, মেয়েকেও বাসার মালিক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। মঙ্গলবার বিকালে প্রীতি অসুস্থ বলে পরিচিত একজনের কাছ থেকে খবর পান লুকেশ। এর পর তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন। রাত ১১টার দিকে ওই বাসার সামনে পৌঁছানোর পর জানতে পারেন তার মেয়ে ভবন থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে।
বাদী লুকেশ উরাং আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড এলাকার ২/৭ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলা থেকে ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমের জানালায় সেফটি বার না থাকায় প্রীতি পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, গত বছর ৪ আগস্ট অনুরূপ আরেকটি ঘটনায় জানালা থেকে পড়ে গিয়ে আরও একজন গৃহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি ওই ভবনের নয়তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই সাংবাদিকের পরিবারের চার সদস্যকে মোহাম্মদপুর থানায় নেওয়া হয়। পর দিন ওই দম্পতির দুই সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ৬ আগস্ট গৃহকর্মী ফেরদৌসী সৈয়দ আশফাকুল হকের বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আহত ওই গৃহকর্মীর মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।