বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠাতে দুই দেশের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির সদস্যদের খুব দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন।
এ বিষয়ে নেপিদোর সঙ্গে যোগাযোগের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং মিয়ানমারে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার তাদের সেনা ও বিজিপির সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করছে। এখন যত শিগগিরই সম্ভব তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।'
সাবরীন বলেন, 'এ বিষয়ে মিয়ানমারের বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত গতকাল বিকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আশা করা যাচ্ছে অতি দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মিয়ানমারের চলমান সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এর ফলে বাংলাদেশের জনসাধারণ, সম্পদ বা সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে যেন হুমকির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।'
মিয়ানমারে চলামান যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ যে ভূ-রাজনীতির সমীকরণে পড়েছে তা থেকে উত্তরণে কূটনৈতিক তৎতপরতা ও আন্তর্জাতিক ফোরামের সহায়তা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সর্তক রয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে নিউইয়র্কের স্থায়ী মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মিয়ানমার সংকট উত্তরণের জন্য আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক যেকোনো উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি অনিবার্যভাবে থাকা প্রয়োজন। সুবিধাজনক সময়ে স্বেচ্ছায়, স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।'
'কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হবে না' বলা হলেও কেন বিজিপি ও সেনা সদস্যদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে–এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মিয়ানমার সরকারের নিয়মিত বাহিনী বিজিপির সদস্যদের আশ্রয় দান এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি এক করে দেখা ঠিক হবে না।'
নৌরুট ও আকাশপথে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, 'আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের নিরাপদে দ্রুত ফেরত পাঠানোই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিমান বা নৌরুটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয় বা কোনো পূর্বশতও নয়। বিমানযোগে প্রত্যাবাসন দ্রুততম সময়ে করা সম্ভব বিবেচনায় বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দিয়েছিল। মিয়ানমার কিছুদিন আগেও ভারত থেকে বিমানযোগে সৈন্য নিয়ে এসেছিল। তাই এ প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ হতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে এসব ব্যক্তিকে ফেরত পাঠাতে চায়। এখানে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আশা করা যাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে সেটা আকাশপথেই হোক বা সমুদ্রপথেই হোক।'
মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকার প্রশ্ন অবান্তর বলে মন্তব্য করেন তিনি। মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা সম্প্রতি ভারতেও আশ্রয় নিয়েছে এবং ভারত থেকে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে বলে জানান।
সাবরীন বলেন, একটি নিয়মিত বাহিনীর বিপদগ্রস্ত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে তারা সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছে এবং প্রথম দিন থেকেই মিয়ানমার সরকার তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তারা বিজিবির কাছে অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়েছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটে বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটে বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিষয়টির প্রতি সংবেদনশীল। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।