জিআই সনদ পাওয়া পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়: বিশেষজ্ঞরা
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতিতে সাহায্য করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ফোরাম (বিআইপিএফ)। একইসাথে এই জিআই সনদ পাওয়া পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশি জিআই পণ্য সুরক্ষা শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিআইপিএফ। ঢাকার গুলশান ২ নম্বরে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনটি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি ফোরামের প্রধান নির্বাহী মো. মনজুরুল রহমান বলেন, "ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হওয়ার মতো অনেক পণ্য থাকার পরও আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পরেছি সম্পদ রক্ষার প্রতিযোগিতায়। এ অবস্থায় থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা।"
তিনি বলেন, "জিআই সনদ উৎপাদকদের পণ্যের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠা করে। এতে অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে তাদের পণ্য আলাদাভাবে চেনা যায়। এর ফলে তাদের এই পণ্যের আলাদা খ্যাতি তৈরি হয়। পণ্য দামও ২০ থেকে ৩০ ভাগ বেশি পাওয়া যায়।"
বিআইপিএফের প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল মিশবাহ বলেন, "বাংলাদেশে দীর্ঘদিন জিআই সম্পর্কিত বিধি-বিধান না থাকায় আমরা দেশে এবং বিদেশে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শন, বিক্রয় ও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরেছিলাম। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন আইন ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষা বিধিমালা প্রণীত হওয়ার পর ২০১৬ সালে দেশে প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি শাড়ি।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি কীভাবে পায়? সরকারের উচিত ভারতের আদালতে এ বিষয় মালমা করা। এটা আমাদের ভৌগোলিক পণ্য।"
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) জিআই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।
সংস্থাটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা ৩১ টি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তিনটি পণ্যকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়ে জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। পণ্য তিনটি হলো, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হচ্ছে কোনো সামগ্ৰীর ব্যবহার করা বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নিৰ্দিষ্ট সামগ্ৰীর ভৌগোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নিৰ্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্ৰী নিৰ্দিষ্ট গুণগত মানদণ্ড বা নিৰ্দিষ্ট প্ৰস্তুত প্ৰণালী অথবা বিশেষত্ব নিশ্চিত করে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বিআইপিএফ-এর ট্রাস্টি সানোয়ার হোসেন বলেন, "ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনও ব্যক্তি সংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়। এছাড়া তদারকি সংস্থাও আবেদন করতে পারে।"