‘রেড ওয়াইন’ হয়ে ১১ বছর পর বিপিএলে ফিরলেন মিলার
বয়স চলছে ৩৪, কিছুদিনের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন ডেভিড মিলার। পরিণত হয়ে উঠেছেন বলেই জীবনের এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত জীবনে পরিণত হয়ে ওঠা মিলার ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে এসেছেন। অথচ ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণে তাকে 'কিলার মিলার' ডাকা হতো। মিলারের এই নামটা বাংলাদেশের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অন্তত ভালোভাবে মনে থাকার কথা। তার এক ওভার থেকে ৩১ রান তুলেছিলেন মিলার।
ব্যাটিংয়ে ঝাঁঝালো ভাবটা রাখলেও মিলার নিজেকে বেশ বদলেছেন, হয়ে উঠেছেন দায়িত্বশীল। 'কিলার মিলার' থেকে এখন তিনি দলের ভরসার নামও। ৩০ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৭২টি। এক সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১৩০৯, গড় ২৯.৭৫। বয়স ৩০ পেরিয়ে ৪৪ টি-টোয়েন্টিতে একটি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরিতে মিলার রান করেছেন ৯৫৯, ব্যাটিং গড় ৪১.৬৯।
তফাৎটা পরিষ্কার, গত চার বছরে মিলারের ব্যাটিং গড় বেড়েছে প্রায় ১২। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) তার পরিসংখ্যান দেখলে পার্থক্য স্পষ্ট হবে। আইপিএলের সর্বশেষ দুটি আসরে ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, ব্যাটিং গড়ও তাই উল্লেখ করার মতো। আইপিএলের এক মৌসুমে মিলার নিজের সর্বোচ্চ রানের দেখা পেয়েছেন বয়স ৩০ পেরনোর পর।
৩০ এর আগে ও পরে; মিলারের ক্রিকেট দর্শনের পার্থক্য পরিষ্কার। ক্যারিয়ারের শুরুতে সফল থাকলেও ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল; নিজের বয়সের ২৬ থেকে ৩০ এর মধ্যের এই চার বছরে আইপিএলের নির্দিষ্ট মৌসুমে তার সর্বোচ্চ গড় ছিল ৩৭.০০। বাকি তিন মৌসুমে একবারও ৩০ এর ওপরে নিতে পারেননি গড়। তবে সর্বশেষ দুই আসরে মিলারের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৬৮.৭১ ও ৩২.৩৮।
কীভাবে এই পরিবর্তন? রেড ওয়াইনের উদাহরণ টেনে মিলার বোঝাতে চাইলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিপক্কতা আসে। বয়সের সঙ্গে বাড়ে অভিজ্ঞতাও, যা ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে বলে মনে করেন তিনি। 'রেড ওয়াইনের' রূপে বিপিএলে মিলারের প্রত্যাবর্তন হচ্ছে। এর আগে একবারই তিনি বাংলাদেশের ঘরোয়া এই লিগে খেলেছেন, সেটা ২০১৩ সালে। চিটাগং কিংসের হয়ে খেলার ১১ বছর পর এবার ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে এসেছেন মিলার।
তখন মিলার ২৩ বছর বয়সী টকবগে এক যুবক। কিংসের হয়ে তিনটি ম্যাচে খেলেছিলেন তিনি, খুব ভালো কিছু করতে না পারলেও বিপিএলে নিজের একমাত্র স্মৃতিটা ভালোভাবেই মাথায় আছে তার। এ কারণেই জার্সির রংও বলে দিলেন প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান, 'আমার মনে হয়, সেবার চিটাগং কিংসে খেলেছিলাম। আমার মনে আছে, জার্সিটি খুব বেশি গোলাপি ছিল। আমি স্রেফ এক সপ্তাহের জন্য ছিলাম এখানে, তিনটি ম্যাচ খেলেছি। বাংলাদেশের ব্যাপারে আমার ভালো স্মৃতি আছে।'
৩০ পেরিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিণত হয়ে ওঠার বিষয়ে মিলার ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, 'আমি জানি না, এখানে কেউ ড্রিংক করে কিনা। বলা হয়, যতো সময় যায় রেড ওয়াইন ততো ভালো হয়। যখন আপনার বয়স বাড়বে, আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনি অতীত থেকে শিখবেন। অনেক ক্রিকেটারের মতো আমরা কেউই খেলাটা সম্পূর্ণভাবে বুঝি না। তাই আপনাকে শেখার মধ্যে থাকতে হবে। আপনাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে এবং যতোটুকু সম্ভব শিখতে হবে।'
নিজেদের ঘরোয়া আসর এসএটোয়েন্টিতে খেলেছেন মিলার, ছিল বিয়ের প্রস্তুতিও। কিছুদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকায় বিপিএলের ম্যাচ দেখা হয়নি তার, তবে চেষ্টা করেছেন ওয়েবসাইটের স্কোরকার্ডে চোখ রাখতে, 'সত্যি কথা বলতে আমি এখানকার কোনো ক্রিকেট দেখিনি। আমি বিরতিতে ছিলাম। আমি দ্রুতই বিয়ে করতে চলেছি। অনেক কিছুর দেখভাল করতে হচ্ছে। তবে আমি ফোনে ক্রিকইনফোতে নজর রেখেছি। যেন আমি পয়েন্ট টেবিলের ব্যাপারে ধারণা রাখতে পারি যে, তাদের (বরিশাল) কী অবস্থা। তবে টিভিতে কোনো ম্যাচ দেখিনি।'