চীনে ধরা পড়েছে বিউব্যুনিক প্লেগ, নতুন মহামারি কি দ্বারপ্রান্তে
প্রাচীন বাণিজ্যপথ সিল্ক রুট হয়ে মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল বিউব্যুনিক প্লেগ। ১৪ শতকের এই মহামারিতে উজাড় হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। জনশূন্য ভূতুরে নগরে রূপ নিয়েছিল প্রাণবন্ত অজস্র নগরী। সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও, এতে সেসময় ইউরোপের অর্ধেক জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথা জানা যায়। এ মহামারির ফলেই ইউরোপজুড়ে নেমে আসে অজ্ঞানতা আর কুসংস্কারে ভরা এক দীর্ঘ অন্ধকার সময়। তাই একে ইউরোপীয়রা 'ব্ল্যাক ডেথ' নামেও অবহিত করে।
শতাব্দী প্রাচীন বিউব্যুনিক প্লেগের জীবাণু কি আবারও নতুন রূপ নিয়ে ফিরে এসেছে? করোনাভাইরাসের চলমান মহামারির মধ্যেই এমন শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে চীন থেকে পাওয়া একটি খবর।
দেশটির ইনার-মঙ্গোলিয়া প্রদেশের বায়ান নূর শহরে সম্প্রতি বিউব্যুনিক প্লেগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি একজন পশুপালক এবং বর্তমানে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তের অবস্থা স্থিতিশীল বলে নিশ্চিত করে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম পিপলস ডেইলির প্রতিবেদন। খবর বিবিসি ও দ্য উইকের।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের আরেক প্রতিবেদন সূত্রে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় আরেকটি প্লেগ সংক্রমণের ঘটনা অনুসন্ধান করে দেখছেন বলে জানানো হয়। এককালে বিপুল পরিমাণ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী এ জীবাণু অবশ্য এখন সহজেই নিরাময়যোগ্য। কিন্তু তারপরও ভাইরাসটি অভিযোজনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার শঙ্কায় সতর্ক পদক্ষেপে কোনো কমতি রাখতে চায় না চীন সরকার।
প্রথম আক্রান্তের ঘটনাটি জানানো হয়, গত শনিবারে। ইনার-মঙ্গোলিয়ার বায়ান নূর শহরের উরাদ মিডল বান্নের এলাকার এক হাসপাতালে ভর্তি পশুপালকের দেহে যা শনাক্ত করা হয়। তার দেহে এ ভাইরাস কিভাবে ছড়িয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় যাকে আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। মারমালেট প্রজাতির বিশালাকার মেঠো ইঁদুর সে কুকুরের সাহায্যে শিকার করেছিল। বিউব্যুনিক প্লেগের জীবাণুর প্রাথমিক বাহন ইঁদুর হওয়ায়, ওই বালক/বালিকা প্লেগ সংক্রমিত হয়েছে কিনা- তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃতীয় মাত্রার প্লেগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়। যার আওতায় প্লেগের জীবাণু বহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত সকল প্রকার প্রানি শিকার বা তা খাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
বিউব্যুনিক প্লেগ আসলে কী?:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইঁদুরের মতো ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণির শরীরে বা তাদের দেহে বসবাসকারী পরজীবী উকুনের দেহে ইয়েরসিনা পেস্টিস নামক ব্যাক্টেরিয়া থেকে এ প্লেগ ছড়ায়।
এসব পরজীবী পরবর্তীতে কোনো মানুষকে কামড়ালে তার দেহেও বিউব্যুনিক প্লেগ ছড়ায়। কোনো কোনো সময় এ ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে পৌঁছালে- তা নিউমোনিক প্লেগ বা ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়ানো মহামারিতে রূপ নেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়, পরজীবীর কামড়ের পর প্লেগের Y পেস্টিস জীবাণু আমাদের রক্তশীরা নালী দিয়ে অনুপ্রবেশ করে সবচেয়ে কাছের প্রত্যঙ্গে আশ্রয় নেয়। সেখানে এটি নিজের বংশবিস্তার শুরু করে, ফলে শরীরের ওই জায়গাটি ফুলে ওঠে। সেখানে রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথাযুক্ত ফোলা অংশকেই বলা হয় বুব্যো, যেখান থেকে এর বিউব্যুনিক প্লেগ নামকরণ।
দীর্ঘায়িত এবং ভয়াবহ পর্যায়ের সংক্রমণ হলে আক্রান্ত প্রত্যঙ্গে পুঁজভর্তি খোলা ঘা দেখা দেয়।
তবে পরজীবী ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে এ প্লেগ ছড়ানোর ঘটনা কিছুটা বিরল।