চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির কর কমিয়ে অর্ধেক করতে পারে সরকার
চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে বিদ্যমান উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক, অর্থাৎ ০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার। খাতটির প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বাড়াতে এ ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই এ-সংক্রান্ত স্ট্যাচুটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) বা সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ জারি করা হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়াসহ সব রপ্তানি পণ্যের উপর ১ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করা হয়।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে করছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।'
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে সরকার রপ্তানি পণ্যের নগদ প্রণোদনা কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে চামড়া খাতের প্রণোদনা পুরোপুরি বাতিল করা হয়। এরপর এখন কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারকরা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান টিবিএসকে বলেন, 'নগদ প্রণোদনা বাতিল হওয়ার পর আমাদের খাত আরও ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছে। এমন অবস্থায় যদি রপ্তানির কর কমানো হয়, সেটি আমাদের জন্য কিছুটা ব্রিদিং স্পেস দেবে।'
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে পারেনি। মূলত পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া উৎপাদন না হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না পাওয়ায় অনেক দেশে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। আবার যেসব দেশে রপ্তানি হয়, সেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে কম দর পাওয়া যায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ কম। আলোচ্য অর্থবছরে ১ শতাংশ হিসেবে ওই রপ্তানির উপর কর আদায় হয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি।
তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৭১৩ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। এই রপ্তানি থেকে কর আদায় হয়েছে ৭৫ কোটি টাকার ওপরে।
সবুজ কারখানাসহ কিছু খাত রপ্তানিতে কম কর দেওয়ার সুযোগ পাবে
এদিকে গত ৪ মার্চ এনবিআর একটি এসআরও জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে ১২ শতাংশের নিচে কর রয়েছে, এমন রপ্তানি খাত প্রমাণ সাপেক্ষে চাইলে বর্তমানের তুলনায় কম হারে কর দিতে পারবে।
বর্তমানে পোশাক রপ্তানিসহ সব রপ্তানি মূল্যের ওপর ১ শতাংশ কর রয়েছে। তবে বছর শেষে কোম্পানির আয়ের ওপর করহার ১২ শতাংশ। আবার সবুজ কারখানা ও পাট খাতের ক্ষেত্রে এ করহার ১০ শতাংশ। এছাড়া কিছু খাতে আরও কম হারেও কর রয়েছে। যেমন, যেসব খাত কর অবকাশের আওতায় আছে, তাদের একটি অংশের কর ১২ শতাংশের কম।
কিন্তু সব খাতের কাছ থেকেই রপ্তানি মূল্যের ওপর ১ শতাংশ কর আদায় করা হচ্ছে।
এনবিআরের ট্যাক্স উইংয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'যারা ১২ শতাংশের নিচে কিন্তু রপ্তানিতে ১ শতাংশ কর দিচ্ছেন, তারা প্রমাণ দাখিল সাপেক্ষে ১ শতাংশের কম হারে (প্রপোরশন অনুযায়ী) কর দিতে পারবেন।'