রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের পর বেইলি রোডের ইফতারের দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়
রাজধানীর বেইলি রোডের 'পিঠা ঘর' রেস্তোরাঁ। প্রতিবছরের মতো এবারও ইফতারের বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন রোস্তারাঁটির কারিগর-কর্মচারীরা। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে ক্রেতা অনেক কম। নেই গতবছরের মতো তেমন বেচাবিক্রির চাপও।
পিঠা ঘরের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ সজল দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এবার ইফতার বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরের এই সময় বিকাল ৪টা-৫টার দিকে কাস্টমারের ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গাই পাওয়া যেত না।'
গত ১ মার্চ বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'আগুনের ভয়ে কাস্টমাররা আগের মতো আসছেন না।'
সজল বলেন, 'গত তিন দিন বানানো অনেক ইফতার আইটেম বিক্রি না হওয়ায় ফেলে দিতে হয়েছে। তাই আজ (শুক্রবার) কম আইটেম তৈরি করা হয়েছে।'
শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, বেইলি রোডের রেস্তোরাঁ ও ইফতারের দোকানগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই। প্রতিবছরের সেই ভিড় আর উৎসবমুখর পরিবেশের পরিবর্তে এবার কিছুটা শান্ত ও অচেনা এক পরিবেশ। যারা নানা পদের ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেন, তারা বসেছেন মাত্র ১৫-২০ পদের খাবার নিয়ে।
দোকানিরা বলছেন, আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কাতেই ক্রেতারা ইফতার বাজারে আসছেন না।
কিছু দোকানির অভিযোগ- অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি অভিযানের পর থেকে রেস্তোরাঁগুলোর অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনার কারণে বহু রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বেইলি রোডের নবাবী ভোজ ও ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির মতো ইফতারির জন্য বিখ্যাত দোকানগুলোতে এখনও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ থাকা দু'টি ভবনে জরুরি নির্গমনের জন্য সিঁড়ি তৈরির জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নোটিশও ঝুলতে দেখা গেছে।
রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মীদের অভিযোগ- পুলিশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অব্যবস্থাপনা তদারকির নামে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের বিক্রয়কর্মী শাহজাহান বলেন, 'আগুনের ঘটনার পর এমনিতেই কাস্টমার অনেক কম আসে। এছাড়াও অনেকে জানেই না রেস্তোরাঁ খোলা আছে নাকি পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে প্রথম রোজার তুলনায় ধীরে ধীরে কাস্টমার বাড়ছে।'
এ ওয়ান ফুড অ্যান্ড পেস্ট্রির বিক্রয়কর্মী মনির হোসেন বলেন, 'গতবার ইফতারের সময় কাস্টমারের ভিড়ে এক মুহূর্তও বসে থাকার ফুরসত ছিল না। কিন্তু এবার কাস্টমার নেই।'
বেইলি রোডের যেই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই ভবনের বিপরীত পাশে অবস্থিত বেকারি সুইস। এখানেও তেমন কাস্টমারের ভিড় নেই।
বেকারিটি থেকে রেশমি জিলাপি কিনছিলেন স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জোবায়েদা রহমান।
তিনি দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে বলেন, 'রোজা শুরুর পর আজই এখানে প্রথম এলাম। গত বছর আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে আমরা এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে আসতাম। এবার পরিস্থিতির কারণে তা আর সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'এর চেয়ে বাসায়ই আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের ইফতার করাব। আর এই মুহূর্তে তাদের রেস্তোরাঁয় দাওয়াত করলেও আমার মনে হয় না তারা আসবে।'