৬০ বছরের বেশি আমেরিকানরা সবচেয়ে সুখী, তরুণরা পিছিয়ে পড়া!
বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ৮ ধাপ পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন ২৩ নম্বরে। গত ১২ বছর ধরে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করে আসছে গ্যালাপ। এবারই প্রথম তালিকার সেরা ২০টি দেশের মধ্যেও নেই যুক্তরাষ্ট্র।
গ্যালাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১২ বছরে বিভিন্ন বয়স ও অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সুখের তারতম্য হয়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা আগের মতো আর সুখী নন।
এর পেছনের কারণ হলো- পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে সেভাবে সমর্থন না পাওয়া, জীবনের পছন্দগুলো বেছে নেওয়ায় তুলনামূলক কম স্বাধীনতা পাওয়া, আগের চেয়ে আরও বেশি মানসিক চাপ অনুভব করা এবং বর্তমান জীবনযাপন পরিস্থিতি নিয়ে কম সন্তুষ্ট থাকা।
অন্যদিকে ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী আমেরিকানদের ক্ষেত্রে এর বিপরীতটা দেখা গেছে। তরুণদের চেয়ে তারা অনেক বেশি সুখী। এদিক থেকে অবশ্য সেরা ১০টি সুখী দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বয়সের ব্যক্তিরা বিশেষ করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ও সমাজ ও আশেপাশের মানুষের সঙ্গে খুব বেশি মিথস্ক্রিয়া করা ব্যক্তিরা তাদের জীবনকে খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শৈশব এবং কৈশোরের প্রথম দিকের সময়টায় সবাই সবচেয়ে সুখী থাকে। কারণ ওই সময়ে পারিবারিক বন্ধন সবচেয়ে দৃঢ় থাকে এবং তেমন কোনো দায়িত্ব নিতে হয় না। তারপর যখন বয়স (২০ থেকে ৫০ বছর) বাড়তে থাকে, তখন তাদের মধ্যে সুখের বিষয়টি কমতে থাকে।
এর পেছনের কারণ হতে পারে ক্যারিয়ার নিয়ে চাপ, অর্থনৈতিক ও সম্পর্কগত চ্যালেঞ্জ, স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ ইত্যাদি।
গবেষকরা বলছেন, ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি বয়সী মানুষের মধ্যে আবার সুখী থাকার বিষয়টি বাড়তে থাকে। এর কারণ হতে পারে অবসর কাটানোর জন্য বেশি সময় পাওয়া, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের পরিস্থিতির গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি।
এছাড়াও অর্থনৈতিক বিষয়টিও এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল এই বয়সের ব্যক্তিরা নিজেদের শখগুলো পূরণ করতে পারেন। চাইলে ভ্রমণে যেতে পারেন কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, যা তাদের সুখী জীবনযাপন করতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে তরুণ আমেরিকানরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যা তাদের অসুখী করে তুলেছে।
২০২৩ সালে জেনারেশন-জেডের ওপর করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জেনারেশন-জেড চাকরি, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা, বাড়ি কেনা ও পরিবার শুরু করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ ও চাপ অনুভব করেন।
উল্লেখ্য, ১৬ থেকে ২২ বছর বয়সী অর্থাৎ যাদের জন্ম ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তাদের জেনারেশন-জেড বলা হয়ে থাকে।
২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বহু মানুষ চাকরিচ্যুত হয়েছেন, যার ফলে এসব তরুণের মনে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, জেনারেশন-জেডের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেশন-জেডের ৫০ শতাংশেরও বেশি তরুণ বলেছেন, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার কারণে তারা চিন্তিত। ৭০ শতাংশেরও বেশি তরুণ জানিয়েছেন, তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।
গত বছরের আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, জেনারেশন-জেড বিহেভিয়ারাল হেলথ ক্রাইসিসের মুখোমুখি হয়েছেন। তারা নানা অর্থনৈতিক অসুবিধাও দেখেছেন। তাদের প্রায় ৬০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা ভালো ও আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি খোঁজা নিয়েও চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছেন। প্রতিবছর বহু তরুণ পড়াশোনা শেষ করে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন। যে কারণে চাকরির বাজারও আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। এটিও তরুণদের অসুখী হওয়ার অন্যতম কারণ।
এবারের বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় টানা সপ্তমবারের মতো শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। শিক্ষাব্যবস্থা, কর্ম ও জীবনযাপনের মধ্যে সামঞ্জস্যতা, পরিবেশের মান, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, নিরাপত্তা ও জীবন নিয়ে মানুষের পরিতৃপ্তি দেশটিকে সবার চেয়ে এগিয়ে রেখেছে।
তালিকায় প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে ফিনল্যান্ড ছাড়াও নর্ডিক অঞ্চলের আরও যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলো হলো- ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন ও নরওয়ে।
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯ নম্বরে। আগের বছর অবস্থান ছিল ১১৮ নম্বর। তালিকার একদম তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক