নিরাপত্তা নিয়ে নতুন অভিযোগ, ফের বড় ধাক্কা খেল বোয়িং, কমে গেল শেয়ারের দাম
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বোয়িংয়ের কয়েকটি বিমানের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একজন 'হুইসেলব্লোয়ার'। এতে নতুন করে চাপে পড়েছে বোয়িং। নতুন এ ধাক্কায় কমে গেছে বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম।
কোম্পানিটির প্রকৌশলী স্যাম সালেহপুর অভিযোগ করেছেন, ৭৮৭ ও ৭৭৭ মডেলের জেট তৈরি করতে 'শর্টকাট' পথ বেছে নিয়েছে বোয়িং।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর তাকে 'চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়' বলে দাবি করেন স্যাম।
তবে বোয়িং বলেছে, এই প্রকৌশলীর দাবিটি 'ভুল' এবং তারা আত্মবিশ্বাসী যে তাদের বিমান নিরাপদ।
কোম্পানিটি বলেছে, 'যেসব সমস্যার কথা তোলা হয়েছে, সেগুলো [ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের] অধীনে কঠোরভাবে প্রকৌশলী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে।'
'এ বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এসব উদ্বেগ নিরাপত্তার আশঙ্কা তৈরি করে না এবং বিমানটির সেবা দেওয়ার আয়ুষ্কাল কয়েক দশক।'
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এসব দাবির তদন্ত করছে জানানোর পর মঙ্গলবার বিমান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম প্রায় ২ শতাংশ কমে যায়।
এছাড়া কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ক্রেতাদের মাত্র ৮৩টি বিমান সরবরাহ করেছে, যা ২০২১ সালের পর সবচেয়ে কম। এতেও কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
প্রকৌশলীর এ অভিযোগ প্রথম প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন বিমান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের নির্মাণ করা বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে।
গত জানুয়ারিতে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ বিমানের অব্যবহৃত নির্গমন দরজার ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এমনিতেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থাটি ইতিমধ্যে ফৌজদারি তদন্তের মুখে ও অন্যান্য আইনি ঝামেলায় রয়েছে।
ওই দুর্ঘটনায় যাত্রীদের কেউ গুরুতর আহত হননি, তবে ওই ঘটনা কোম্পানিটিকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এর পর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-এর উড়াল সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে বোয়িং। সেইসঙ্গে ৭৩৭ ম্যাক্সের উৎপাদন সম্প্রসারণও বন্ধ রেখেছে।
এ ঘটনার পর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তদন্তে নামে। এর জেরে বোয়িং নাটকীয়ভাবে বিমান উৎপাদনের গতি ধীর করে দিয়েছে।
কড়া সমালোচনা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার আতশকাচের নিচে আসার পর গত মাসে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ ক্যালহান চলতি বছরের শেষের দিকে পদত্যাগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রকৌশলী স্যাম সালেহপুরের আইনজীবীরা বলেন, ৭৮৭ বিমান সংযোজনের সময় জেটের বডির বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করার সংযোগস্থলগুলোতে বেশি চাপ দিয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে ১ হাজারের বেশি বিমানে।
গত জানুয়ারিতে এফএএতে জমা দেওয়া এই অভিযোগে স্যাম সালেহপুর অভিযোগ করেছেন, এ পদ্ধতির কারণে বিমানের আয়ুষ্কাল কমে যেতে পারে।
তার আইনজীবী ডেবরা ক্যাটজ ও লিসা ব্যাঙ্কস এক বিবৃতিতে বলেন, 'গত কয়েক বছরে বোয়িং নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যার প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে এসব সমস্যা।'
আইনজীবীরা আরও বলেন, সালেহপুর তার উদ্বেগ প্রকাশের পর তাকে ৭৭৭ বিমান নিয়ে কাজ করার জন্য বদলি করে দেওয়া হয়।
তারা বলেন, শিগগিরই ওই বিমানের সংযোজনে অন্যান্য সমস্যাও লক্ষ করেন সালেহপুর।
আইনজীবীরা বলেন, 'তাকে চাকরিচ্যুতির, গুরুত্বপূর্ণ সভা, প্রকল্প ও যোগাযোগ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তার অসুস্থতাজনিত ছুটির যৌক্তিক আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তার নিজ দক্ষতার বাইরের কাজে নিয়োগ করা হয়। সর্বোপরি তাকে সহকর্মীদের কাছে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ঘোষণা করা হয়।'
৭৩৭-এর চেয়ে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বড় বিমান। ৭৮৭ নিয়মিতই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সাল থেকে উড্ডয়ন করছে বিমানটি, যদিও শুরু থেকেই এর মান নিয়ে অভিযোগ আসছে।
বোয়িং শেষপর্যন্ত ৭৮৭-এর উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং প্রায় দুই বছর সরবরাহ বন্ধ রাখে। ২০২২ সালে এফএএ বোয়িংয়ের সরবরাহে সবুজ সংকেত দেয়।
জানুয়ারিতে দরজা খুলে যাওয়ার পর থেকেই বোয়িংয়ের তদারকি বাড়িয়েছে এফএএ। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিমান শিল্পসংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্য জানাতে উৎসাহিত করে।
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এফএএ বলে, 'আমরা সমস্ত রিপোর্ট আদ্যোপান্ত তদন্ত করি।'