দুই রাষ্ট্র ব্যর্থ! ইসরাইলের সমর্থকরা আশা ছেড়ে দিচ্ছেন
বিখ্যাত কলামিস্ট ও অধ্যাপক পিটার বেইনার্ট সম্প্রতি ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। বাস্তব অবস্থার সাপেক্ষে 'টু স্টেট সল্যুশন' সঠিকভাবে কার্যকর করা আর সম্ভব না দাবী করে তিনি বলেন, 'এখন প্রয়োজন ২ জাতির জন্য সমান সুবিধাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রচলন করা।'
মার্কিন ও ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের ইসরায়েলের পাশে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মাধ্যমে সংকট নিরসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, বলেন তিনি।
'যুক্তরাষ্ট্রে আমার মতো টু স্টেট সল্যুশনে বিশ্বাসী মানুষেরা ধীরে ধীরে এর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে, এবং বিকল্প কোনো সমাধান খুঁজে পায়নি।' গত ৮ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমসের সহ-সম্পাদকীয়তে এ নিয়ে লেখেন পিটার বেইনার্ট।
ইসরায়েল ক্রমাগত ভোটাধিকারবিহীন কয়েক মিলিয়ন ফিলিস্তিনির জীবনের নিয়ন্ত্রণ করলে, তাদের সামনে দুটি পথই খোলা আছে: একটি, বর্তমানের এই অস্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা। আরেকটি, ফিলিস্তিনিদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ভোটাধিকার দেওয়া।
এতদিন এই সংকটের সমাধান হিসেবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকেই উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হিসেবে দেখা হয়ে আসছে। যুগ যুগ ধরে চলা দখলদারিত্ব এবং সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে শুধু ফিলিস্তিনের অঞ্চলই কমছে, এ কারণে বর্তমানে টু স্টেট সল্যুশনের মাধ্যমে সংকট নিরসন অসম্ভব বলে মনে করছেন পিটার।
তিনি বলেন, 'বাইন্যাশনাল স্টেট' বা ওয়ান স্টেট সল্যুশন এখন 'ডি ফ্যাক্টো', যেখানে ফিলিস্তিনিদের কোনোই নাগরিক সুবিধা নেই। 'দুটি আলাদা রাষ্ট্রের সহাবস্থানের মাধ্যমে সংকট নিরসনের যে পন্থার কথা আমরা এতদিন বিশ্বাস করে এসেছি, কষ্টকর সত্য হলো, এই পন্থা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। উদারনৈতিক ইহুদিবাদীদের সময় এসেছে আলাদা ইহুদি রাষ্ট্রের কথা ভুলে গিয়ে ইহুদি আর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম-অধিকারের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা,' যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের আগে বেইনার্টের এই মন্তব্যের ফলে উদারনৈতিক রাজনীতি মহলে বিতর্কের শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরবর্তী অংশ ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলায় এ বিতর্ক জোরালো হয়ে উঠেছে।
সমালোচনার মুখে ইসরায়েল অধিগ্রহণ স্থগিত রেখেছে। বরাবরই ইসরায়েলের নীতির বিরোধিতা করার জন্য তরুণ আমেরিকান ইহুদিদের মধ্যে বেইনার্ট জনপ্রিয় মুখ। বেইনার্টের এই অবস্থানের পরিবর্তন আমেরিকান ইহুদি মহলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র থাকা অনেক ইহুদির কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস।
বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে তার এই মত নিয়ে আলোচনা চলছে। তার এই মতকে অবাস্তব ও ইহুদিবিদ্বেষীও বলছেন অনেকে।
আমেরিকান জিউশ কমিটির প্রধান নির্বাহী ড্যাভিড হ্যারিস ব্যঙ্গ করে টুইটবার্তায় বলেন, 'নিউইয়র্ক টাইমসের উপ-সম্পাদকীয়তে জাতিসংঘের সদস্য এবং অন্য কোনো জাতির সমাপ্তি সম্বন্ধীয় মতামত প্রকাশিত হয়েছে?'
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের অনেক আন্দোলনকারী বলছেন, ইহুদিবাদীদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছেন পিটার। যদিও অনেক তরুণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই বাইন্যাশনাল স্টেট ধারণার গ্রহণযোগ্যতা আছে।
সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সাংবাদিকতার অধ্যাপক ও দ্য আটলান্টিকের লেখক পিটার বেইনার্ট টু স্টেট সল্যুশনের অন্যতম সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে আচারনিষ্ঠ ইহুদি এই লেখক বিভিন্ন সময় ওই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এর আগে, ইসরায়েলের নীতির প্রতি অন্ধ সমর্থন থাকায় আমেরিকান ইহুদি নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করেন তিনি। সেনা মোতায়ন করে রেখে, দখলদারিত্ব বন্ধ না করেই নেওয়া টু স্টেট সল্যুশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতির সমালোচনা করেন। সঙ্গে তিনি আরও কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবনার সঙ্গে এই গণতান্ত্রিক বাই-ন্যাশনাল স্টেটের কথা বলেন।
তার মতে, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একটি রাষ্ট্রের অধীনে ইহুদী ও ফিলিস্তিনিরা সমান অধিকার নিয়ে থাকবে, যেখানে দুটি জাতির স্বায়ত্তশাসন থাকবে।
পিটার বেইনার্ট ইসরায়েলে তেমন পরিচিত মুখ না হওয়া সত্ত্বেও তার এই মতকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঐতিহাসিক অসলো শান্তিচুক্তি পরিচালনাকারী ইসরায়েলের প্রাক্তন মন্ত্রী ইয়োসি বেইলিন বলেন,'আমার কাছে ইসরায়েলের গুরুত্ব হলো এটি একটি গণতান্ত্রিক ইহুদি রাষ্ট্র। এখন এর এই বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেলেই তো এটা আর আমার দেশ থাকে না।'
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ড্যান শাপিরো বলেন,'ইসরায়েলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা যুক্তিপূর্ণ, কিন্তু এই প্রস্তাব অবাস্তব এবং অপরিণামদর্শী। টু স্টেট ব্যবস্থার মধ্যেই সংকট নিরসনের কাজ করাই অধিক ফলপ্রসূ।'
বেইনার্ট বলেন, তিনি এই তাৎক্ষণিক সমালোচনায় চিন্তিত নন। সম-অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি বিকল্প পথের দীর্ঘমেয়াদী আলোচনা গড়ে তুলতেই তিনি আশাবাদী।