বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম
টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। মূলত সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
স্থপতি তাবাসসুম পরিবেশগতভাবে টেকসই ডিজাইনে অবদানের জন্য সমধিক পরিচিত। স্থাপত্যের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিতে শুধু বাণিজ্যিক দিক নয় বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ও সাধারণ মানুষের চাহিদাও বিবেচনায় থাকে।
গতকাল (বুধবার) টাইম ম্যাগাজিন ২০২৪ সালের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকা প্রকাশ করে। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি সারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে 'নিঃস্বার্থ স্থপতি' উল্লেখ করে সারাহ লিখেছেন, "তাবাসসুমের নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও তার স্বার্থহীনতার পরিচয় দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট, শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কস ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
ঢাকার দক্ষিণখানে বায়তুর রউফ নামের একটি শৈল্পিক নকশার মসজিদ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন এই স্থপতি।
আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। টাইম লিখেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে মেরিনা তাবাসসুম এমন এক ঘরানার বাড়ি তৈরি করেছেন, যার নির্মাণ ব্যয় যেমন কম, তেমনি এই বাড়ি সহজে স্থানান্তরও করা যায়।
স্থপতি তাবাসসুম ২০২১ সালে মানবিক ঘর তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক লাভ করেন। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট–এর ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
তাবাসসুম ৮০'র দশকের শেষে বাংলাদেশের প্রথিতযশা স্থপতি মাজহারুল ইসলামের 'স্থানিক-প্রতিক্রিয়াশীল স্থাপত্য' দ্বারা প্রভাবিত স্থপতিদের একজন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী; যিনি স্থাপত্যের মধ্য দিয়ে সমসাময়িক হয়ে উঠার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতিকেও খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।