ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে এবার পালটা আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে ইরানের একটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া সিরিয়া ও ইরাকেও বিস্ফোরনের খবর পাওয়া গেছে।
ইরান দাবি করেছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টার পর তাদের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসফাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু ছোট ড্রোন দ্বারা আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছে এবং তাদের রাডার সিস্টেম ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশকারী কোনো অজ্ঞাত বিমান শনাক্ত করেনি। তারা আরও জানিয়েছে, ইসফাহান থেকে প্রায় ৫০০ মাইল উত্তরে তাবরিজ অঞ্চলে আরও কয়েকটি ছোট ড্রোন প্রতিহত করেছে তারা।
অন্যদিকে, বিবিসি'র যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী সিবিএস নিউজকে দু'জন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানে একটি ইসরায়েলি 'মিসাইল' আঘাত করেছে।
ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানের একটি বিমানবন্দরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারণ জানা যায়নি।
অন্যদিকে, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাথে যুক্ত সংবাদ সংস্থা তাসনিম তাদের 'বিশ্বস্ত' সুত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে ইসফাহান বা ইরানের অন্য কোথাও বিদেশি হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একজন বিশ্লেষক বলেন, ছোট ড্রোনগুলো সম্ভবত ইরানের ভেতর থেকে চালানো হয়েছে।
ইসফাহান প্রদেশে ইরানের সেনাবাহিনীর একটি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং এতে এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমানের বেশ কয়েকটি স্কোয়াড্রন রয়েছে। ইসফাহান ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল। নাতাঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনাও ইসফাহান প্রদেশে অবস্থিত। ইসফাহান প্রদেশের বিমানঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর ইরান তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবরিজ শহরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসফাহান, শিরাজ ও তেহরান শহরে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে ইরান। ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এ দেখানো ফ্লাইটের গতিপথ অনুযায়ী, শুক্রবার ভোরে ইরানের ওপর দিয়ে যাওয়া এমিরেটস ও ফ্লাইদুবাইয়ের কয়েকটি ফ্লাইট তাদের রুট পরিবর্তন করেছে।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বরাতে জানা গেছে, ইরানে হামলার দায় স্বীকার করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানীতে হামলায় দুই জেনারেলসহ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সাত সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান আনুমানিক ৪০০–৫০০ ড্রোন ও মিসাইল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে।
যদিও ইরানের ছোঁড়া দুই শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, ইসরায়েল ও অন্য কয়েকটি দেশ মিলে কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গতিরোধ করেছে, যার বেশিরভাগ হয়েছে ইসরায়েলের আকাশসীমার বাইরে।
আইডিএফের (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানান, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করেছে এবং একটি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শুক্রবারের হামলার আগে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তেহরান তার ভূখণ্ডে যেকোনও হামলার 'কঠোর জবাব' দেবে।
মধ্যপ্রাচ্য 'বিপজ্জনক' অবস্থায় রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, 'আমাদের নীতির বিরুদ্ধে যায় এমন সামরিক আচরণ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে অবশ্যই বাধ্য হতে হবে।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন