২০২৫ অর্থবছরে উৎসে কর থেকে অতিরিক্ত ২২,৬৯০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য এনবিআরের
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ২৬,৪০০ কোটি টাকা ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর আদায় করতে হবে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের সহজ উপায় হিসেবে এনবিআর মূলত 'ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স' (টিডিএস)- বা উৎসে কর কর্তনের দিকে নজর দিতে চাচ্ছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কর আদায়ের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এনবিআরের আয়কর বিভাগ। ওই রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বাড়তি রাজস্বের ২২,৬৯০ কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশই টিডিএস হিসেবে আদায় করতে চায় সরকারি সংস্থাটি।
এরমধ্যে, কর ছাড় সীমিত করে ১০০০ কোটি টাকা, কর কমপ্লায়েন্স ইমপ্রুভ করে ৫০০ কোটি টাকা, করদাতাদের নতুন আউটরিচের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়গুলো একীভূতকরণের মাধ্যমে আরও ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স বিভাগ।
এছাড়া, উইথহোল্ডিং রিটার্নের অডিট, অনলাইন কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমাদান, উন্নত অডিট ব্যবস্থা এবং করদাতাদের জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত আরও ১,৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চাইছে এনবিআর।
তবে সহজ পন্থা হিসেবে টিডিএস থেকে বাড়তি কর আদায় করার এ পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, এর ফলে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের চাপ আরও বাড়তে পারে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "টিডিএস আদায় করা সহজ। কারণ রেট বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আর কিছু ফাইন বাড়িয়ে দিয়ে, এ খাত থেকে বাড়তি আদায় করা যায়। কিন্তু আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে যদি এ পথে এনবিআর হাঁটে, তা যৌক্তিক হবে না।"
"এতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে। এর চেয়ে এনবিআরের উচিত হবে, নতুন করদাতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পথ তৈরি করা," বলেন তিনি।
এনবিআর ৫০টির বেশি খাত থেকে টিডিএস হিসেবে আয়কর আদায় করে থাকে, যা মোট আয়করের প্রায় ৬০ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআর টিডিএস হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার আয়কর আদায় করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এই উপায়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে চায়। আর নতুন যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে আগামী অর্থবছরে কেবল টিডিএস হিসেবেই আদায় হবে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার মত। সেক্ষেত্রে মোট রাজস্বে টিডিএসের অংশ আরও বেড়ে ৬৫ শতাংশ হবে।
এনবিআরের ওপর আইএমএফের শর্ত
আগামী ২৪ এপ্রিল আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসছে। মূলত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ অনুমোদনের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া সময়াবদ্ধ শর্তগুলো কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ, তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে এসে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধিদল।
এর অংশ হিসেবে আগামী ২৮ এপ্রিল ইনকাম ট্যাক্স ও ভ্যাট উইংইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, আগামী বছরের ট্যাক্স আদায়ের পরিকল্পনা ২৮ এপ্রিল তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে যে প্রোগাম বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম হলো– প্রতি বছর ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও (জিডিপিতে করের অংশ) ০.৫ শতাংশ হারে বাড়ানো। তবে প্রথম বছর এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
এর বাইরে আরও যেসব শর্ত ছিল, তারমধ্যে মোটাদাগে ছয়টি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শর্ত চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
এগুলো হলো— এনবিআরের কাস্টমস এবং ভ্যাট শাখায় কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা, ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান তৈরি ও গ্রহণ করা এবং মধ্যমেয়াদী রাজস্ব কৌশল গ্রহণ করা।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠন করা হলেও তার কার্যক্রম এখনও দৃশ্যমান হয়নি। অন্যদিকে, বাকি দুটির কার্যক্রমও এখনও দৃশ্যমান নয়।
তবে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব কৌশল (মিডিয়াম অ্যান্ড লং-টার্ম রেভেনিউ স্ট্র্যাটেজি– এমএলটিআরএস) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।"