‘ইউরোপ মৃত্যুর মুখে’: আরো দৃঢ় সামরিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের তাগিদ মাখোঁর
ইউক্রেন যুদ্ধে বর্তমানে সুবিধেজনক অবস্থায় রাশিয়া। একইসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ভরতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। ফলে উভয় সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ। যা থেকে মুক্ত হতে ইইউকে বিশ্বমঞ্চে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরো স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী হতে হবে। এসব মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ফ্রান্সের অভিজাত সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
মাখোঁ বলেন, "ইউরোপ মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে। যদিও এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেই।"
তাঁর মতে, সামরিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য চাপে দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে ২৭ সদস্য দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অত্যন্ত আবেগঘন ভাষায় তিনি এ ভাষণ দেন। যেখানে ইউরোপীয় নেতাদের প্রতি এখনই হুমকিগুলো মোকাবিলায় সজাগ ও উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানান।
মাখোঁ বলেছেন, রাশিয়াকে কোনোভাবেই ইউক্রেনে জিততে দেওয়া যাবে না। তিনি ইউরোপের সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে, উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি ইউরোপীয় একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
ইউরোপের সরকারগুলোকে ইউরোপে তৈরি সমরাস্ত্র ক্রয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "প্রতিরক্ষা শিল্প ছাড়া প্রতিরক্ষা থাকে না… (প্রয়োজনের চেয়ে) এই খাতে আমাদের বিনিয়োগ কয়েক দশক ধরে কম হয়েছে। আমাদের আরো (অস্ত্র) উৎপাদন করতে হবে, এবং তা দ্রুত করতে হবে। ইউরোপীয় হিসেবেই আমাদের উৎপাদন করতে হবে।"
"ইউরোপকে প্রমাণ করতে হবে সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রজা নয়, এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে কীভাবে সংলাপ (কূটনীতি) করতে হয়– সেটি তার জানা আছে।"
অনেকদিন ধরেই ইইউয়ের যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরশীলতা কমানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন মাখোঁ। আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে– ইউরোপের সাথে সম্পর্ক অবনতির আশঙ্কা যখন করা হচ্ছে – তারমধ্যেই এ আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলেন তিনি।
এর আগে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের নিরাপত্তার ব্যয়ভার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে রেখেছে। প্রতিরক্ষার পেছনে তাদের ব্যয় যথেষ্ট নয়।
এরপর ফ্রান্স ও জার্মানিসহ প্রভাবশালী ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। অবশ্য সে সময় ইউক্রেন যুদ্ধের মতো নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল না ইউরোপে। বর্তমানে যা রয়েছে, এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনায়– এটি গুরুতর হতে পারে।
অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়ার হুমকিসহ বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ছাতার কোনো বিকল্প নেই তাদের সামনে। অনেকে এটাও ধারণা করছেন, ইউরোপে ফ্রান্সের সমরাস্ত্র বিক্রি বাড়াতেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন মাখোঁ।
অনুবাদ: নূর মাজিদ