সারাদেশে ভয়াবহ লোডশেডিং, ঘাটতি কমপক্ষে ৩৩০০ মেগাওয়াট
চলমান তাপপ্রবাহে দেশে রেকর্ড পরিমাণ লোড-শেডিং হয়েছে গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল)। এদিন তীব্র দাবদাহের মধ্যেই সারাদেশে প্রায় ৩,৩০০ মেগাওয়াট লোড-শেডিংয়ে নাকাল হয়েছে জনজীবন। চরম আবহাওয়ায় দেশজুড়ে চলছে সপ্তমবারের মতো হিট অ্যালার্ট। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
বিদ্যুতের কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার দুপুর ২টায় সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬,২০০মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন হয়েছে ১২,৭৫৩ মেগাওয়াট এবং লোড-শেডিং হয়েছে ৩,৩৪৭মেগাওয়াট।
সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার বিপরীতে সারাদেশে ২,৫০০ থেকে ২,০০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড-শেডিং করতে হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। তাপপ্রবাহের আগে গড়ে সাধারণত ৫০০-১,০০০ মেগাওয়াট লোড-শেডিং হতো। সোমবার হয়েছে ৩,২০০ মেগাওয়াট, যা ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ লোড-শেডিং।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে লোডশেডিংয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিতরণ শাখার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "অনুমাননির্ভর বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি করে তা প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে লোডশেডিং আরও বেশি।"
দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই প্রতিষ্ঠানের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে আমাদের বিতরণ এলাকায় যে চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার কারণে এই গরমের মধ্যেও বাধ্য হয়ে আমাদেরকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলে কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাও করতে হচ্ছে।"
আরইবি সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সারাদেশের গ্রামাঞ্চলে লোড-শেডিং হয়েছে ২,৮০০ মেগাওয়াটের বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, 'রাজধানীতেই যদি একদিনে ১৪ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ যায়, তাহলে ঢাকার বাহিরের গ্রামাঞ্চলের কী ভয়াবহ অবস্থা! সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের এতো বাজে সুফল আর কখনো দেখি নাই।'
কুমিল্লার নাঙগলকোট উপজেলার বাসিন্দা আবু হানিফ টিবিএসকে জানান, "একদিকে তীব্র দাবদাহ, আরেক দিকে ভয়াবহ লোড-শেডিং; ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। দিন দিন যেভাবে হিটস্ট্রোক বাড়ছে, কোনো দিকেই শান্তির বার্তা পাচ্ছি না।"
এদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৬ দিনের তাপপ্রবাহে দেশে হিটস্ট্রোকে অন্তত ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে, আগামী ২ মে পর্যন্ত শুধু সিলেট বিভাগ ছাড়া চলমান তাপপ্রবাহ কমার কোনো পূর্ভাবাস নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।