রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড, নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে
রাজশাহীতে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ রহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে থাকা রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, ২০০৫ সালের পর এত বছরে ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা কখনো রেকর্ড হয়নি, যা আজ হলো। তবে ১৯৭২ সালে একদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। অবশ্য ১৯৭২ সালের পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মাঝখানের কোনো রেকর্ড নেই।
তবে এবছরের মতো এত দীর্ঘ সময় টানা ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা কখনো রেকর্ড হয়নি।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ১৯ এপ্রিল থেকে রাজশাহীত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা বিরাজ করছে। যা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত। গত শুক্রবার থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে। এ অবস্থায় রাজশাহীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আজ সকাল থেকে নগরীতে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই পুরো নগরী স্তব্ধ হয়ে আছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রাস্তাঘাটে মানুষ অনেক কম। সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম।
নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান বলছেন, তাপপ্রবাহে ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ঘরের মধ্যে ফ্যানের বাতাসও গরম। আর বাইরে তো যাওয়াই যাচ্ছে না। গেলে চোখমুখ জ্বালা করছে।
নগরীর আলুপট্টি এলাকার চা বিক্রেতা সুকুমার বলেন, এই গরমে সকালে এসে ১১ থেকে ১২টা পর্যন্ত চা বিক্রি করি। এরপর বাড়িতে চলে যাই। আবার বিকাল ৫টায় এসে দোকান খুলি। গরমে চা বিক্রি অনেক কমে গেছে।
রাজশাহীর সাহেব বাজারের প্রজাপতি কালেকশনের স্বত্বাধিকারী সাদিকুল ইসলাম অনি বলেন, গরমে বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে তা সন্ধ্যার পর। এই তাপপ্রবাহে যাদের প্রয়োজন হচ্ছে শুধু তারাই বাইরে আসছেন।
তিনি বলেন, পুরো মার্কেটের অবস্থা একই।
নির্মাণশ্রমিক আসলাম বলেন, মাঝে বিরতি নিয়ে নিয়ে কাজ করি।
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে মাঠে ঘাটে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যার ধারণক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ বেশি রোগী ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক সাহিদা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালের চারটি ওয়ার্ড মিলে শিশু ওয়ার্ডে ১৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৬০০ জন রোগী ভর্তি আছে। রোগীদের বেশিরভাগ জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত।
এদিকে টানা তীব্র তাপদাহে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ছে।
বাঘার আমচাষী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, এইবার এমনিতেই গাছে খুব আম ধরেছে। এর মধ্যে টানা তাপদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ছে।
রাজশাহী কৃষি অফিসের প্রধান কৃষিবিদি উম্মে ছালমা জানান, এই তীব্র তাপদাহে আমের গুটি কিছুটা ঝরে পড়ছে। এছাড়া অন্য ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমরা কৃষকদের আমের গাছে পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।