অনলাইনে ইসরায়েল বিরোধী মন্তব্যকারীদের গ্রেফতার করছে সৌদি আরব
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/05/03/ezgif.com-webp-to-jpg-converter_23.jpg)
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলের সমালোচনা বা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এমন নাগরিকদের গ্রেপ্তার করছে সৌদি সরকার। এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গ সহ বেশ কিছু গণমাধ্যম।
যুক্তরাষ্ট্রের দুই ঘনিষ্ট মিত্র সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নাগরিকদের এভাবে গণহারে গ্রেপ্তার করা কি তাহলে সৌদি আরবের ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে সম্মত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে? এমন প্রশ্নই এখন ঘোরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে করা অনলাইন মন্তব্যের জন্যও সৌদি আরবের সাম্প্রতিক এমন গ্রেপ্তার বাক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক মত প্রকাশের ওপর দেশটির চলমান বিধিনিষেধকে প্রতিফলিত করে। রিয়াদভিত্তিক কূটনীতিক ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইসরায়েলে প্রাণঘাতী আগ্রাসন এবং এর পরবর্তী সময়ে উদ্ভূত নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এই আটককে দায়ী করা হয়েছে।
৭ অক্টোবরের পর গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা বোমা হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর ফলে আরব বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে আন্দোলন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/03/ezgif.com-webp-to-jpg-converter_24.jpg)
সৌদি আরব এবং মিশর ও জর্ডানের মতো আঞ্চলিক মিত্ররা এই আন্দোলন প্রবণতায় খানিকটা চিন্তিত। নাম না প্রকাশ করা শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন, ইরান এবং ইসলামপন্থী দলগুলো এই সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহের ঢেউ উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। এক দশকেরও বেশি সময় আগের আরব বসন্তের স্মৃতি এখনও আরব শাসকদের মধ্যে তাজা, যার পুনরাবৃত্তি এড়াতে মরিয়া তারা।
ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব প্রকাশের কারণে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের মধ্যে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি প্রকল্পে কাজ করা কোম্পানির একজন সর্বোচ্চ কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
একজন ব্যক্তি সৌদি আরবে আমেরিকান ফাস্টফুড বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলকে কখনও ক্ষমা করা উচিত নয় এমন মন্তব্য করায় একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ও নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেকে।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সরকারের মানবাধিকার কমিশন এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
সৌদি সরকারের একটি সূত্র গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং এর কারণ হিসেবে ৭ অক্টোবরের পরে সরকারের উচ্চ স্তরের সতর্কতাকে দায়ী করেছেন। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে অনলাইনে বিবৃতি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে, এ উদ্বেগেই এমন অভিযান চালাচ্ছে সৌদি সরকার।
এদিকে, ২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টদের হাতে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় সম্মেলন করতে যাচ্ছেন সৌদি আরবের বিরোধীদলীয় নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা আশা করছেন তারা সৌদি 'জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি' উন্মোচন করবেন, যা বাকস্বাধীনতা এবং সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়।
গাজা সম্পর্কিত পোস্টের কারণে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক এমন গ্রেপ্তার অভিযান থেকে বোঝা যায় প্রিন্স মোহাম্মদের নেতৃত্বে সরকার এমন নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বা নেবে যারা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে সমর্থন করে না।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/03/ezgif.com-webp-to-jpg-converter_25.jpg)
৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে এই বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও রিয়াদ ও ওয়াশিংটন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচিতে মার্কিন সমর্থন নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু করেছে। এই আলোচনার অংশ হিসেবে, ইসরায়েলকে সৌদি আরব, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে, অন্যথায় সম্ভাব্য সুবিধা বা জোট থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের।
গত ৭ অক্টোবর থেকে সৌদি আরব গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে আসছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি সেনা প্রত্যাহার করে নেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তবে তাদের সাথে এটি উষ্ণ সম্পর্কের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে শিগগিরই তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বিশেষ করে নেতানিয়াহু যখন উগ্র ডানপন্থী জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে সৌদি আরবে ঠিক কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।
তবে যুদ্ধের আগে একটি অনলাইন পোস্টের জন্য কারাবন্দী পরিবারের সদস্যের সাথে দেখা করা একজন সৌদি ব্যক্তির জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে রিয়াদের নিকটবর্তী সর্বোচ্চ সুরক্ষিত একটি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরবের কূটনীতিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছেন যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব প্রকাশের পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয়ের মতো বিভিন্ন সৌদি ইস্যুতে মন্তব্য বা কিংডম বা এর নেতৃত্বের কোনও সমালোচনার জন্যও অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
সৌদি আরবের ফিটনেস প্রশিক্ষক ও নারী অধিকারের আইনজীবী মানাহেল আল-ওতাইবিকে গত জানুয়ারিতে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নারীদের জন্য আরও স্বাধীনতার পক্ষে সামাজিক মিডিয়া পোস্ট এবং ঐতিহ্যবাহী আবায়া আলখাল্লা না পরে জনসমক্ষে নিজের ভিডিও শেয়ার করার কারণে তার বিরুদ্ধে 'সন্ত্রাসী অপরাধের' অভিযোগ আনা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং সৌদি মানবাধিকার গ্রুপ এএলকিউএসটি তার মামলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
লন্ডনভিত্তিক সৌদি বিরোধী নেতা ইয়াহিয়া আসিরি বলেন, 'ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা নিয়ে জনগণ খুবই বিচলিত এবং তাদের দেশের কাছ থেকে জোরালো প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করে, কিন্তু তারা তা দেখতে পাচ্ছে না'।
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য কর্তৃক রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া আসিরি উল্লেখ করেন, গাজা সংঘাত নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য নীতি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে অসন্তোষ অনেকে।
তবে এসব নিয়ে সৌদি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন থাকলেও তাদের উদ্বেগ অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন আসিরি।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন