এসএসসি পরীক্ষায় সন্তানদের এ সাফল্য আমাদের কাছে মা দিবসের উপহার
পড়ালেখার জন্য মেয়ের পেছনে সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েছেন রায়হান আরা। একটাই উদ্দেশ্য মেয়ে যেন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। প্রতিদিন তিনি মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন, ছুটি না হওয়া পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন। এরপর স্কুল ছুটি হলে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন। বাসায় গৃহশিক্ষকের পাশাপাশি কোচিংয়েও পড়িয়েছেন মেয়েকে। আজ রবিবার যখন তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলো, তখন মনে হয়েছে তার সব প্রচেষ্টাই যেন সার্থক।
আজ ফলাফল প্রকাশের সময় ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রায়হান আরা। মেয়ের ফলাফল শুনেই তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।'
মেয়ের এমন ফলাফল রায়হান আরার আজ মা দিবসের আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। পাসের দিক থেকে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা।
ছেলেদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ, মেয়েদের ৮৪.৪৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ এর দিক থেকেও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা।
রায়হান আরা বলেন, 'আমার মেয়ে যে ফলাফল করেছে, সেটি আমার কাছে অনেক বড় একটি উপহার। এই মুহূর্তে আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মা।'
চল্লিশোর্ধ্ব রায়হান আরা (৪০) একজন গৃহিণী। মেয়ের পেছনে তার পরিশ্রমের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত পৌঁছানো আমার জন্য সহজ ছিল না। একজন মা সবসময়ই সন্তানদের পেছনে বাবার চেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে থাকেন।'
তিনি বলেন, 'মেয়ের একটি সুন্দর জীবনের জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি...আজ এখানে উপস্থিত সব মায়ের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য গর্বিত।'
রায়হান আরা এখন তার মেয়েকে দেশের নামকরা কলেজে ভর্তি করতে চান।
তিনি বলেন, 'আমি চাই আমার মেয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করুক। সে ভিকারুননিসায় পড়েছে। এখন আমি আমার মেয়েকে হলিক্রস কলেজে ভর্তি করতে চাই। তাছাড়া এ ভালো ফলাফল মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
ভিকারুননিসার আরেক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মা বীথিও তার মেয়ের ফলাফলে আনন্দ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমার পরিচিত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা-মায়েরা সবাই খুশি। আমিও আমার মেয়ের ফলাফলে খুশি।'
এ বছর ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শতকরা জিপিএ-৫ এর হার ৯.০৪ শতাংশ।
এসএসসি-তে তিনটি বিভাগের মধ্যে পাসের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারপর রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা ও এরপর মানবিক বিভাগ।
গত বছর মোট এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে হিসেবে এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৪৪৯ জন কমেছে।