মাটির নিচে ২ হাজার বছরের পুরোনো মোজাইক শিল্প
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ। আজ থেকে ২,৩০০ বছর আগে গ্রিকরা এ নগরীর পত্তন করেছিল। তখন এর নাম ছিল জিউগমা। এক সময় অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে, পরিণত হয় রোমান সেনাদের সদরদফতরে। সাম্রাজ্যের ছোট্ট কিন্তু সমৃদ্ধ এই রাজ্যে প্রায় ৮০ হাজার লোকের বাস ছিল। এই জিউগমাতেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে বড় (এবং সবচেয়ে প্রাচীন) মোজাইক শিল্প।
২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এই পুরো এলাকাটি পানির তলাতেই ছিল। কারণ ইউফ্রেটিস নদীর বাঁধ। প্রতিদিন পানির উচ্চতা বাড়ছিল এক ফুট করে। অথচ নগরীর তলায় তখনও পড়ে আছে হাজার বছরের পুরনো মোজাইক।
এর সাত বছর পর ২০০৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এখানে খনন কাজ শুরু করেন। পরে এখানে খনন করতে করতেই পাওয়া যায় এর রত্নভাণ্ডারের হদিস। সন্ধান মেলে ছোটবড় প্রায় ২০০০টি বাড়ির। সময়মতো সবগুলো সম্পদ তুলে আনলেন মাটির ওপর। আর এর সঙ্গে তিনটি চোখ ধাঁধাঁনো মোজাইক শিল্প, একেবারে অক্ষত, মসৃণ। অভিযাত্রীদের ভাষায় ওটা ছিল স্মরণকালের সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ধার মিশন।
২য় খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অর্থাৎ আজ থেকে ২,২০০ বছর আগে তৈরি এই মোজাইকগুলো তৈরি হয়েছে অসংখ্য রঙ্গিণ কাঁচের টুকরো দিয়ে। এতে ফুটে উঠেছে গ্রিক পুরাণের বিভিন্ন চিত্র। যেমন- এদের একটিতে আছে ৯জন মিউজের প্রতিকৃতি। দেবতা জিউসের ঔরসজাত এই ৯জন মিউজ সঙ্গীত, নৃত্য, কাব্য, সাহিত্য, শিল্প ও বিজ্ঞানের মতো গুণগুলোর প্রতীক।
দ্বিতীয় মোজাইকটিতে আছে গ্রিক সমুদ্রদেবতা ওশেনাস ও তার বোন টেথিস। তৃতীয় মোজাইকটিতে আছে এক যুবকের প্রতিকৃতি।
এই প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রধান ড. কুতালমিস গোর্কে। তিনি তুরস্কের আংকারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক। প্রফেসর কুতালমিস গোর্কে বলেন, 'এখন থেকে আমরা এই মোজাইকগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে কাজ করব। মোজাইকগুলো যেহেতু ভূমির উপর করা হয়েছে, তাই এদের উপর উঁচু করে শক্ত ছাদ দেওয়া হবে যাতে রোদ, বৃষ্টিতে সেগুলো নষ্ট না হয়।
গবেষকরা ধারণা করছেন, এখানে প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার বাড়ি আছে। এর মধ্যে এখনও ২৫টি বাড়ি পানির নিচে রয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই পুরো খনন ও উদ্ধার কাজ শেষ হবে বলে জানালেন প্রফেসর কুতালমিস।