গাজায় এপির লাইভ ফিড বন্ধ ও যন্ত্রপাতি জব্দ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলো ইসরায়েল
গাজায় মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপির) লাইভ ফিড বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েলের। একইসাথে দেশটি দক্ষিণাঞ্চলে সংস্থাটির ব্রডকাস্টিংয়ের যন্ত্রপাতি জব্দ করেছিল।
তেল আবিবের এমন সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করে। এরপর তথ্যমন্ত্রী শ্লোমো কারহি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কয়েক ঘণ্টা পর এপির সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেয়।
ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। একইসাথে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপের নিন্দা জানানো হয়েছে। এদিকে দ্য ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন এটিকে 'মিডিয়াকে স্তব্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপের সর্বশেষ' বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট লরেন ইস্টন বলেন, তারা 'ইসরায়েলি সরকারের পদক্ষেপকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করে'।
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী কারহি বলেন, কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা নেটওয়ার্কে সম্প্রচারের জন্য ছবি সরবরাহ করায় এপির সরঞ্জামগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। কারণ এটি দেশটির একটি নতুন মিডিয়া আইন লঙ্ঘন করে। যে আইনের মাধ্যমে আল জাজিরাকে দেশটিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
কারহি দাবি করেন, আল জাজিরাকে শেয়ার করা এপির ছবিগুলি গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল।
এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েল দেশটিতে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তাদের অভিযোগ এটি 'হামাসের মুখপত্র' হিসেবে কাজ করছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করছে।
যদিও আল জাজিরা এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং সংবাদমাধ্যমটি ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞাকে 'অপরাধমূলক কাজ' ও 'মানবাধিকার লঙ্ঘন' বলে নিন্দা করেছে। সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও এটিকে 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আঘাত' বলে নিন্দা করেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, ইসরায়েলের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সেডরোট থেকে উত্তর গাজার একটি সাধারণ দৃশ্য সম্প্রচার করার ক্যামেরাটি জব্দ করা হয়।
সেক্ষেত্রে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এপিকে একটি পত্র ধরিয়ে দেন; যা তথ্যমন্ত্রী শ্লোমো কার্হি কর্তৃক স্বাক্ষরিত। সেখানে অভিযোগ করা হয়, সংবাদ সংস্থাটি দেশের বিদেশি সম্প্রচার আইন লঙ্ঘন করছে। একইসাথে সংস্থাটি গত বৃহস্পতিবার লাইভ ট্রান্সমিশন বন্ধ করার মৌখিক আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে।
যদিও এপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি ইসরায়েলের সামরিক সেন্সরশিপ নিয়ম মেনে চলেছে। সৈন্যদের বিপদে ফেলতে পারে এমন বিবরণ সম্প্রচার থেকে তারা বিরত ছিল।
এদিকে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে ঘটনাটিকে 'উদ্বেগজনক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। একইসাথে তারা সাংবাদিকদের কাজ করার ক্ষমতা ও অধিকার রয়েছে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, "একটি বড় মার্কিন মিডিয়া আউটলেটের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা 'পাগলাটে' আচরণ।"
এদিকে জেরুজালেমের ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে বলেছে যে, "জব্দ করা ঘটনার ফলে এপির মাধ্যমে সারা বিশ্বের শত শত এজেন্সির নিকট গাজার উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ চিত্র সরবরাহ করতে বাধা দেবে।"
এদিকে মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ইসরায়েলকে 'আক্রোশজনক সেন্সরশিপের' জন্য অভিযুক্ত করেছে।
এদিকে গত ৯ মে ইসরায়েলের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের শহর নাজারেথের অবস্থিত আল জাজিরার একটি স্টুডিওতে অভিযান চালিয়ে একটি ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। এর আগে ইসরায়েল সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেস, কার্যালয় ও সম্প্রচার বন্ধ কিরে।
আর গত এপ্রিলে ইসরায়েলি সংসদ একটি নতুন মিডিয়া আইন অনুমোদন করে। যাতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত বিদেশি নেটওয়ার্কগুলিকে 'সাময়িকভাবে' ৪৫ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়। একইসাথে আইনে পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা নবায়ননের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান