ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এ পরিণত হয়েছে নিম্নচাপটি, মোংলা ও পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমাল-এ পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যা ৬টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৪০৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার রাতে বাংলাদেশের বেশি জায়গা নিয়ে আঘাত হানার পরে প্রায় তিনদিন বাংলাদেশের ওপরই অবস্থান করতে পারে। যার সমাপ্তি ঘটতে পারে শেরপুর, নেত্রকোণা হয়ে ভারতের মেঘালয়ের পাহারশ্রেণিতে গিয়ে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঘূর্ণিঝড়টি আজ রাতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলায় আঘাত করতে পারে। এখন পর্যন্ত যে গতিপথ দেখছি বিভিন্ন মডেলে সেখানে বেশিরভাগ প্রভাবই বাংলাদেশের ওপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরে দেশে এর প্রভাবে ভারি থেকে অতি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থলভাগে আঘাতের পরে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পরে, তবে তিনদিন পর্যন্ত দেশে এর প্রভাব থাকতে পারে।"
উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে ও দমকা হাওয়াসহ ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত (রোববার মধ্যরাতের পরে) বাড়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, "ঘূর্ণিঝড় রেমাল অস্বাভাবিক ধীরগতিতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, আলিপুর দুয়ার, কুচবিহার জেলা ও মেঘালয় রাজ্যের উপর দিয়ে আসাম রাজ্যে প্রবেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। স্থল ভাগে প্রবেশের পরে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র যখন খুলনা ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে তখনও বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।"
তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের ৮ বিভাগেই ব্যাপক বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।"
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনা বিভাগ ৫০০-৬০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগ ৪০০-৫০০, ঢাকায় ২০০-৩৫০, চট্টগ্রামে ২০০-৩০০, রাজশাহীতে ২৫০-৩৫০, ময়মনিসংহে ৪০০-৫০০, সিলেটে ১৫০-২৫০, এবং রংপুর বিভাগ ২৫০-৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।