দখলমুক্ত মেয়র আনিসুল হক সড়ক, নেই চিরচেনা যানজট
তীব্র যানজট, রাস্তার দুই পাশে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের লম্বা সারি, বিক্ষিপ্তভাবে যানচলাচল ছিল সাতরাস্তা সংলগ্ন মেয়র আনিসুল হক সড়কের নিত্য দিনের চিত্র। তবে ট্রাফিক পুলিশের গত কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুরো সড়ক। তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত এ রাস্তা আবারো হয়েছে দখলমুক্ত।
রাস্তার দুই পাশে নেই চিরচেনা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের লম্বা লাইন, কমেছে যানজট। ভোগান্তি কমেছে রাস্তায় যাতায়াত করা লাখো মানুষের ।
তেজগাঁও এরিয়ার বাসিন্দা নূর আলম, বিগত বিশ বছর যাবৎ কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি কাঁচামাল কিনে শহরের বিভিন্ন গলিতে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, 'এই সড়কে যানজট লেগেই থাকতো। তবে গত কয়েকদিন ধরে এই রাস্তায় যানজট নেই। রাস্তার পাশের গাড়ির সংখ্যাও কমেছে।'
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মেয়র আনিসুল হক সড়কের ট্রাক স্ট্যান্ডের ধারণ ক্ষমতা ৭০০-৮০০; কিন্তু প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে এই রাস্তায়।
এই সড়কের দুই পাশে কিছু গ্যারেজ থাকায় অনেক ট্রাক এখানে আনা হতো মেরামতের জন্য। কিছু নষ্ট ট্রাক রাস্তার ওপরেই পড়ে থাকত। এছাড়া দূরদূরান্ত থেকে আসা ট্রাক এখানে পার্কিং করায় সড়কে যান চলাচলের জায়গা হয়ে যেত সংকীর্ণ। যার কারণে এখানে যানজট ছিল প্রতিদিনকার স্বাভাবিক দৃশ্য।
সম্প্রতি আনিসুল হক সড়কের যানজট নিরসনে ট্রাক কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিক ফেডারেশন, সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সড়কের পাশে ট্রাক রাখতে পারবে। এছাড়া শুক্র ও শনিবার সড়কে এক লেনে ট্রাক রাখা যাবে।
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, 'ঢাকা মহানগরবাসীর কাছে আনিসুক হক সড়ক আবেগের একটি কাজ। এটি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে আনিসুল হক অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। আমরা ট্রাক কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সহায়তায় সড়কটি পুনরুদ্ধার করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ট্রাফিক কম থাকে। এই সময় এখানে ট্রাক থাকতে পারবে। এছাড়া শুক্র ও শনিবার সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকে, তাই এক লেনে এ ছুটির দিনে আমরা ট্রাক থাকার সুযোগ করে দেব।'
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মনির তালুকদার বলেন, 'আমরা জায়গার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। টিএনটির জায়গা আমাদের দিয়ে দিলে ইনশাল্লাহ এই সমস্যা থাকবে না। আর আমরা ট্রাফিক পুলিশকে সবসময় সহায়তা করি এবং করব।'
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক সাতরাস্তা থেকে রেললাইন পর্যন্ত রাস্তার ট্রাক স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করে সড়কটিকে 'পার্কিংমুক্ত' করেন। তবে আনিসুল হকের মৃত্যুর পর থেকে ফের দখলদারদের হাতে চলে যায় সড়কটি।