চোখের পাপড়িতে বসবাস করা খুদে পোকা, তাদের আমলে নেওয়া উচিত?
আমাদের বেশিরভাগেরই চোখের পাপড়ি সহ আমাদের মুখে বাস করে ডেমোডেক্স মাইট নামে ছোট, আংশিকভাবে স্বচ্ছ, সিগার-আকৃতির, আট পায়ের খুদে পোকা। এরা হামাগুড়ি দিতে পারে, খেতে পারে এবং ডিম পাড়তে পারে। এবং এগুলো এতই ক্ষুদ্র যে আমরা এদের উপস্থিত টের পাই না।
বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপটোমেট্রির [চোখ এবং চোখের দৃষ্টি নিয়ে কাজ করা] সহকারী ক্লিনিকাল অধ্যাপক মেলানি ম্যাসন বলেছেন, "আমি সবসময় আমার রোগীদের বলি, 'আমরা কখনোই একা নই।'"
যদিও এটি বিরক্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। পোকাগুলো অন্যান্য অণুজীবের পাশাপাশি আমাদের ত্বকের মাইক্রোবায়োমের একটি প্রাকৃতিক অংশ। ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সহ অন্ত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবাণুর সমষ্টিগত জিনোমকে একত্রে মাইক্রোবায়োম বলা হয়।
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা [ইমিউন সিস্টেম] সাধারণত এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে মাঝে মাঝে এগুলোর জন্য ত্বকে লালভাব, ব্যথা, জ্বলন এবং দৃষ্টি সমস্যার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডেমোডেক্স মাইটগুলো প্রায়ই শৈশবে ত্বক এর সাথে ত্বকের সরাসরি সংসস্পর্শের মাধ্যমে আসে এবং বয়সের সাথে সাথে এদের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের ৭২ বছর বয়স হতে হতে এগুলো অধিক পরিমাণে ত্বকে বাস করতে শুরু করে বলে জানিয়েছে একটি গবেষণা।
পোকাগুলোর দুটি প্রধান প্রজাতি রয়েছে: ডেমোডেক্স ফলিকুলরাম যেটি চুলের ফলিকল এবং চোখের পাতায় পাওয়া যায় এবং ডেমোডেক্স ব্রেভিস যেটি তেল গ্রন্থিতে পাওয়া যায়। এগুলো চামড়ার মৃত কোষ খায়।
যদিও পোকাগুলো অত্যন্ত নিরীহ, এদের সংখ্যা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে চোখের চারপাশে ব্লেফারাইটিস [চোখের পাতায় ব্যথা হওয়া] বা মুখে রোসেসিয়ার [দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের অবস্থা যার ফলে লালভাব এবং রক্তনালীগুলো দৃশ্যমান হয়] মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আমেরিকান একাডেমি অব অফথালমোলজির (চক্ষুচিকিৎসাবিজ্ঞান) একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মুখপাত্র নাতাশা হার্জ বলেছেন, কিছু মানুষের মধ্যে ডেমোডেক্স মাইটের সংখ্যা কেন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তা এখনো সম্পুর্ন পরিষ্কার নয়। এবং কোনটি প্রথমে আসে, মাইটের অতিরিক্ত জনসংখ্যা নাকি ব্লেফারাইটিস, সেটিও এখনো সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
লালভাব, জ্বলন এবং দৃষ্টি সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দিলে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। চিকিত্সার মধ্যে রয়েছে টি ট্রি অয়েল দিয়ে ফেসিয়াল স্ক্রাব (মুখ ঘষা) এবং মেডিকেটেড আই ড্রপ।
চিকিৎসার সময় পোকাগুলোকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় নিয়ে আসা হয়। এমনকি এদেরকে কখনোই সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
পোকাগুলো যাতে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে না যায় তার জন্য চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে বলেছেন।
চোখের জন্য নিরাপদ একটি মৃদু ক্লিনজার দিয়ে ভ্রু এবং চোখের পাপড়ি সহ মুখ ভালো করে ধুতে হবে। নিয়মিত মুখ ময়েশ্চারাইজ করতে হবে।
অন্যের প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রসাধনী পরিবর্তন করতে হবে কারণ মাইট নির্দিষ্ট ধরণের মেকআপে বেঁচে থাকতে পারে।
অতিরিক্ত সময় রোদে থাকা যাবে না কারণ এতে ত্বকে ঘাম ও তেল জমে যা পোকাগুলোর জন্য আরো খাবার সরবরাহ করে। খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখাই পোকাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল চাবিকাঠি।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়