দেশ, জাতি, সংস্কৃতির মেলবন্ধনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর তালিকা করলে শীর্ষেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই নিজেদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর অনেকেই পাড়ি জমান দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলের দিকে তাকালে সেটা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। ১৫ সদস্যের এই দলে তেমন কারও শেকড় নেই যুক্তরাষ্ট্রে।
এক দেশে জন্ম নিয়ে ক্রিকেট বা ফুটবলে অন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এখন বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলে ভিন্ন অনেকগুলো দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির যে মেলবন্ধন ঘটেছে, তা সম্ভবত আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দলের প্রায় অর্ধেক সদস্যের জন্ম ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাজার উপমহাদেশে। এ ছাড়া ক্রিকেটের পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারও রয়েছে দলটিতে।
প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, প্রথম অভিজ্ঞতায় তারা আয়োজক হওয়ার সুযোগও পেয়েছে। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের গুজরাটের আনন্দে জন্ম নেওয়া মোনাঙ্ক প্যাটেল। গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলে খেলা মোনাঙ্ক ২৩ বছর বয়সে ভারত ছেড়ে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে।
একই রাজ্যে জন্ম নেওয়া অলরাউন্ডার নিসর্গ প্যাটেল অবশ্য স্বীকৃত ক্রিকেট খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রেই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অভিষেক হয়েছে দিল্লির মিলিন্দ কুমারের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলের দুটি খেলেছেন মিলিন্দ। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন শিখর ধাওয়ান-ইশান্ত শর্মাদের সাথে।
ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের দুই নায়ক সৌরভ নেত্রভালকর ও হারমিত সিং ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেন ভারতের জার্সিতে। সেই আসরে তাদের সতীর্থ ছিলেন লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, জয়দেব উনাদকাট, সন্দ্বীপ শর্মা, হার্শাল প্যাটেলরা।
বাঁহাতি ফাস্ট বোলার নেত্রভালকর ক্রিকেটের পাশাপাশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন ওরাকলে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়কত্বও করেছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
কিছুদিন আগে পাওয়ার হিটিংয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া হারমিত মূলত বাঁহাতি স্পিনার। ২০১০ ও ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন হারমিত, ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে বড় অবদান ছিলো তার। তার বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রয়াত কিংবদন্তি বিষেণ বেদীর সঙ্গে তুলনা করে ইয়ান চ্যাপেল।
সেই আসরে ভারতের অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদও পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে, তবে বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তার।
পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া দুজন ক্রিকেটারও আছেন দলটিতে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে অসাধারণ ডেথ বোলিং করে সিরিজ জেতানো আলী খানের জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ানো এই ডানহাতি পেসার ১৯ বছর বয়সে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োতে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শায়ান জাহাঙ্গীরও পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে।
দলের আরেক উইকেটরক্ষক অ্যান্ড্রিয়েস হাউসের ক্যারিয়ারও অনেকটা একই রকম৷ ৩০ বছর বয়সী এই হার্ড হিটার যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অভিষেকের আগে অনূর্ধ্ব-১৯ ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়।
আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান শ্যাডলি ভ্যান শাকউইক ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন ফ্রি স্টেটের হয়ে, যা আবার হাউসের জন্মস্থান। বাঁহাতি এই পেসার পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত ওয়াইনবার্গ বয়েজ হাইস্কুলে, যেখানে পড়েছেন কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিসও।
কোরি অ্যান্ডারসনকে কে না চেনে! নিউজিল্যান্ডের হয়ে তারকাখ্যাতি কুড়ানো এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার এক সময় ছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দলের একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটারও তিনি।
তবে এই দলে দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একমাত্র খেলোয়াড় নন অ্যান্ডারসন। কানাডা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নীতিশ কুমারও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে, যিনি কানাডার হয়ে খেলেন ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
দলের মাত্র চারজনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তবে এর মধ্যে দুজনের আবার শেকড় ভারতে। অ্যালাবামায় জন্ম নেওয়া নশটুশ কেনজিগের পরিবার ভারতে চলে যায় তার বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। তবে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির কারণে প্রায় এক যুগ আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন কেনজিগে।
নিউইয়র্কে জন্ম পেসার জেসি সিংয়ের, এর দুই বছর পর তার পরিবার চলে যায় ভারতে। প্রায় দশ বছর পর তারা আবার ফিরে আসে যুক্তরাষ্ট্রে। স্টিভেন টেলর ও অ্যারন জোন্সের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে। তারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও কানাডার বিপক্ষে লড়বে যুক্তরাষ্ট্র। কাল উদ্বোধনী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ কানাডা।