দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেল 'নগদ'
একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণের সীমা তুলে দেওয়ার মতো নীতিমালায় ছাড় দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা এককভাবে, যৌথভাবে বা যৌথ মালিকানার মাধ্যমে ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না। তবে নগদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
আজ সোমবার (৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩ জুন থেকে 'নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি'-কে তফসিলি ব্যাংক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এর মানে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক এখন থেকে অন্য প্রচলিত ব্যাংকের মতোই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে প্রাথমিক পার্থক্য হলো, ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর শুধুমাত্র একটি সদর দপ্তর থাকবে, অন্য কোনো শাখা থাকবে না।
২০২০ সালে নগদ সর্বপ্রথম ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
লাইসেন্স পাওয়ার পর নগদ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও তানভীর এ মিশুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, ''ক্যাশলেস লেনদেন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে ডিজিটাল ব্যাংকের বিকল্প নেই। দেশের সিংহভাগ মানুষ এখনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে রয়েছে। তাদের নিয়ে কাজ করবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক।'
তিনি বলেন, 'দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ঐতিহাসিক। আমি আমাদের ৯.৫ কোটি গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।'
ডিজিটাল ব্যাংকের প্রস্তুতির বিষয়ে তানভীর এ মিশুক বলেন, 'গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হবে না, বরং ব্যাংকই মানুষের হাতে হাতে ঘুরবে। কোনো রকম জামানত ছাড়াই সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিম চালুসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনসংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান দেবে ডিজিটাল ব্যাংক। শিগগিরই এই ব্যাংকিং সেবা দিতে শুরু করব বলে আশা করি।'
নুরুন নাহার স্বাক্ষরিত অন্য আরেকটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি এবং ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড কর্তৃক 'নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি.' এর শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ক (১) ধারা প্রযোজ্য হবে না মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক কোম্পানি আইনের (১৯৯১) ১৪ক (১) ধারায় বলা হয়েছে, একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না।
এর আগে, নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের বিনিয়োগকারী/শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যেকের মালিকানা ১০ শতাংশের বেশি হলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের মালিকানা সীমা থেকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধ অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত ২৭ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় এ অনুমোদন দেয়।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের সংখ্যা ১২.৫০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি ৬.২২৫ কোটি শেয়ারের বৃহত্তম অংশের মালিক, যা ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় অর্ধেকের (৪৯.৮০%) প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে 'নগদ'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক।
আরেক মার্কিন কোম্পানি ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসির হাতে রয়েছে ৩ কোটি ১২৫ লাখ শেয়ার, যা ২৪.৯০ শতাংশ মালিকানার সমান। তাদের প্রতিনিধি সামিট গ্রুপ অব কোম্পানিসের পরিচালক মুহাম্মদ ফরিদ খান।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেডের ১.৩৭৫ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার অর্থ নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১১ শতাংশ মালিকানার সমান। নগদের একজন কর্মকর্তা নকিব চৌধুরী, ফ্লাক্লুশন ভেঞ্চারসের প্রতিনিধি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, 'বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কোনো কোম্পানির ছোট শেয়ার নেওয়ার ক্ষেত্রে কম আগ্রহী থাকে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্যই নগদকে এ ছাড় দেওয়া হয়েছে।'
গতবছরের জুনে ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা (সর্বোচ্চ ১০% বা ১২.৫ কোটি টাকা) মূলধন জোগান দিতে হবে। তবে, সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে ১০ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা যেতে পারে।
নির্দেশিকা অনুসারে, ডিজিটাল ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স বা সনদ দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে হবে। আইপিওর পরিমাণ হতে হবে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক অবদানের ন্যূনতম পরিমাণের সমান।