আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ২৮,০৪৮ কোটি টাকা লোকসানের প্রাক্কলন
ডাইনামিক ফর্মুলায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারনের পরেও আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ৫ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা নিট লোকসান করবে। সংস্থাটির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ লোকসান হবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
যদিও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জ্বালানি তেল সরবরাহকারি রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা মুনাফা করবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
একইভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ১৮ হাজার ১০৬ কোটি টাকা লোকসানের প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ সংস্থার ৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজেট প্রণয়ন সম্পর্কে অবহিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের তৈরি করা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থা দুটির সম্ভাব্য লোকসানের এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোট ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে লোকসানের পরিমাণ ৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ থেকে বলা যায়, আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান সাড়ে চারগুণের বেশি বাড়বে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প কর্পোরেশনের লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ২৫টি বস্ত্রকল রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি চালু এবং বাকিগুলো বন্ধ। বন্ধ মিলগুলো কয়েক বছর ধরে বেসরকারিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি বাদে অন্যান্য মিলের বেসরকারিকরণে বিশেষ অগ্রগতি নেই।
একইভাবে পাটকল কর্পোরেশনের আওতাধীন ২৬টি মিলের নিট লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪৭ কোটি টাকা।
চিনি শিল্প ও খাদ্য কর্পোরেশনের ১৫টি মিলের ২৯০ কোটি টাকা লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা লোকসান প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
তবে সরকারের ইস্পাত কারখানাগুলো আগামী অর্থবছর শেষে লাভ করবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ। অর্থবিভাগ বলছে, চালু থাকা ৯টি কারখানার আগামী অর্থবছরে ১০৩ কোটি টাকা নিট লাভ হতে পারে।
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) আগামী অর্থবছরে ২৩৫ কোটি টাকা লাভ করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অদক্ষতা, পুরানো মেশিনপত্র, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে লোকসান করে আসছে বলে দেশের বিশ্লেষকরা বলে আসছেন। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা বেসরকারিকরণের পক্ষেও বিভিন্ন সময়ে মত দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতো থিঙ্কট্যাঙ্কগুলো।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা নিট লোকসান করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বর্তমানে টিসিবি মাসে একবার এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও চালের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।
আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা লোকসান করবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ২০৩ কোটি টাকা আয় করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।