১৫ শতাংশ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, কেবল ১৫ শতাংশ কর দিয়ে এবং কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যারা নিয়মিত কর দেন তাদের নিরুৎসাহিত করবে।
আজ শুক্রবার (৭ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, "আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখছি এই সুবিধা দেওয়ার পরও রাজস্ব সংগ্রহ খুব বেশি বাড়ে না। যারা সৎভাবে আয় করে কর দিচ্ছেন, তাদের সর্বোচ্চ করের হার ৩০ শতাংশ। আর যারা কর দেননি, আয় কীভাবে করেছেন তা পরিষ্কার না, তাদের ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা সৎ করদাতাদের প্রতি চরম অন্যায়। নৈতিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এতে যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।''
তিনি বলেন, ''উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, টাকার দুর্বল মান, আমদানি কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে সমস্যাসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে যন্ত্রণা চলছে। প্রত্যেকটা জায়গায় অস্বস্তি রয়েছে। এরকম সময়ে প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।''
তিনি আরও বলেন, ''সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট মোকাবেলায় মূল্যস্ফীতি চাপ কমিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বস্তি আনার উদ্যোগ দরকার ছিল। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো দরকার ছিল। মানুষ খাদ্য অভ্যাস, জীবনযাত্রার ব্যয় কাটছাঁট করে চলছে। সেগুলোতে ফেরত আনতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি দিয়ে সম্ভব না। এর সাথে সহযোগী রাজস্ব নীতির সহযোগিতা দরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সে ধরনের পদক্ষেপ স্পষ্ট নয়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানোর কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। কীভাবে হবে তা স্পষ্ট নেই।''
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ''জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। বিনিয়োগ প্রক্ষেপণ অনেক বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১ শতাংশ। আর প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৩৩ শতাংশ প্রাক্কলন করা হবে। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগে ২৭.৩ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ বিনিয়োগ কীভাবে হবে তা বোধগম্য নয়। কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। সরকারের প্রাক্কলিত বিনিয়োগ লক্ষ্য অর্জনে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা বাড়তি লাগবে। কোথা থেকে টাকা আসবে?
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা ও ৮ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ''মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। তাই কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াই এটিকে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা চ্যালেঞ্জিং হবে। এ বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ শতাংশ। অতিরিক্ত ৬ শতাংশ কোথা থেকে আসবে?''
তিনি বলেন, ''২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অতি উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া চলমান অর্থনৈতিক উদ্বেগ মোকাবিলায় যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া হয়নি।''
তিনি আরও বলেন, ''মূল্যস্ফীতি রোধ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতের বিনিয়োগে অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।''
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ''মূল্যস্ফীতির হিসাব করলে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, গতবার কর দিতে হয়নি, করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ার কারণে এবার তাদের কর দিতে হবে।''
তিনি বলেন, ''একটা হলো মূল্যস্ফীতি, আরেকটা মূল্যস্তর। মূল্যস্ফীতি গড়ে বলা হয়। সুঁই সুতা থেকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত নিয়ে হিসাব করা হয়। দরিদ্র মানুষের পণ্যে মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের বেশি। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই বাজেটে।''
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম 'সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার'। আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে।
এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।