ছাড়-কিস্তি সুবিধার মাঝে ঈদে বেড়েছে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজারের বিক্রি; গ্রামের দিকে বাড়ছে বাজার
দুয়ারে কোরবানির ঈদ। কোরবানির মাংস সংরক্ষণের জন্য এ সময়ই বেশি ফ্রিজ কেনেন ক্রেতারা। তাই সারাদেশে জমে উঠেছে ফ্রিজের বিক্রি। সেরা দামে সেরা মানের ফ্রিজ কিনতে ঈদের আগমুহূর্তে বিভিন্ন কোম্পানির শোরুমগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
ঈদকে ঘিরে ফ্রিজের চাহিদা অনেক বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো আকর্ষণীয় অফার দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের পছন্দের ফ্রিজ কিনতে দিচ্ছে কিস্তির সুবিধা।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছর প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি ফ্রিজ দুই ঈদে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কোরবানির ঈদে ফ্রিজের চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। এছাড়া এ বছর গ্রামের দিকে বেড়েছে ফ্রিজের বাজার।
বেসরকারি চাকরিজীবি হোসেন আহমেদ তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকার কয়েকটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের শো-রুমে ঘুরছেন ফ্রিজ কেনার জন্য। বাসায় আগে থেকেই থাকা সাধারণ ফ্রিজের সঙ্গে ঈদে আরেকটি ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজার কিনবেন তিনি।
কয়েকটি শো-রুম ঘুরে অবশেষে তিনি ওয়ালটন থেকে ২৫৫ লিটারের ডিপ ফ্রিজ কিনলেন ৩৮ হাজার টাকায়।
শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'প্রতিবছর আমরা গ্রামেই কোরবানি করি। তবে এ বছর কোরবানি শহরেই করতে হবে। তাই মাংস রাখার জন্য একটা ফ্রিজার কিনতে হলো।'
নতুন মডেল, ছাড়-কিস্তি সুবিধা
ঈদের কথা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোও ফ্রিজের নতুন নতুন মডেল সংযোজন করেছে। ক্রেতা টানতে দিচ্ছে মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ২০–২৫ শতাংশ বেশি ফ্রিজ বিক্রির আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদ ঘিরে আগে আগেই শোরুমগুলোতে ফ্রিজের সরবরাহ বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
এছাড়া নতুন নতুন ডিজাইনের ফ্রিজ নিয়ে এসেছে ব্র্যান্ডগুলো। ক্রেতা আকর্ষণে ফ্রিজ কিনলে ক্যাশব্যাক, লাখপতি হওয়ার অফার ও ১০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট সুবিধাও রেখেছে অনেক কোম্পানি। প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফ্রিজে রয়েছে কিস্তির সুবিধা।
কনকা ও গ্রী ব্র্যান্ডের ফ্রিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রমার্টের ডিএমডি নুরুল আফসার বলেন, 'আমাদের একটি অফারে একজন ক্রেতা তার আইডি কার্ড দেখিয়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পেতে পারেন। আবার স্ক্র্যাচ কার্ড অফারে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ মূল্যছাড় রয়েছে।'
'ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে এবং তিন থেকে ১৮ মাসের কিস্তিতে আমাদের ফ্রিজ কেনা যায়,' বলেন তিনি।
ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতির বিষয়ে ওয়ালটন ফ্রিজ বিভাগের চিফ বিজনেস অফিসার তাহসিনুল হক বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের কোম্পানি সর্বাধুনিক ফিচারের বেশকিছু নতুন মডেলের ফ্রিজ বাজারে এনেছে।
'আমাদের ব্র্যান্ডের এসব ফ্রিজ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া শূন্য সুদে ছয়মাসের সহজ কিস্তিসহ সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের কিস্তির সুবিধা রয়েছে,' বলেন তিনি।
ঈদ উপলক্ষে ভিশন ফ্রিজের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। অনলাইনে ফ্রিজ কিনলে কোম্পানিটি দিচ্ছে ১০ শতাংশ মূল্যছাড়।
গ্রামের দিকে বাড়ছে ফ্রিজের বাজার
দ্বীপ জেলার ভোলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গপসাগরের একটি ছোট দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি। দ্বীপের দুই ইউনিয়নের বসবাস ১০ হাজার পরিবারের। কৃষি ও মৎস্য শিকারের ওপর নির্ভরশীল এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ঘরেই এখন ফ্রিজ।
গ্রামের কৃষক মুসলেম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের বাড়িতে ৪টি পরিবারের মধ্যে প্রত্যেকের ঘরে ফ্রিজ রয়েছে।'
আগের ফ্রিজটি ছোট হওয়ায় এবারের ঈদে আরেকটি ফ্রিজ কিনবেন বলে জানান এ কৃষক।
চরের বাজারে ফ্রিজের দোকান দিয়েছেন ফারুক হোসেন। ওয়ালটন, মিনিস্টার, ভিশনসহ দেশীয় ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রি করেন তিনি।
ফারুক হোসেন বলেন, 'ঈদ আসার পর এখন দিনে ৪–৫টি ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব পরিবারই কিস্তিতে ফ্রিজ কিনছে।'
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সর্বত্রই এখন ফ্রিজের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। দেশের ৫৫ শতাংশ পরিবার ফ্রিজ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে গ্রামেই প্রায় ৭০ শতাংশ।
ওয়ালটনের ফ্রিজ বিভাগের চিফ বিজনেস অফিসার তাহসিনুল হক বলেন, 'গ্রামগঞ্জে ফ্রিজের বাজার বাড়ছে। ওয়ালটনের ফ্রিজের প্রায় ৭০ শতাংশ বিক্রি হয় উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে।'
'সাধারণত গ্রামের মানুষ তাদের গরু বা ধান বিক্রি করে ফ্রিজ কেনেন। কেউ কেউ কিস্তিতে কেনেন,' যোগ করেন তিনি।