ঈদযাত্রা: বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজায় যানজট, স্বাভাবিক রয়েছে পদ্মা সেতু
ঈদুল আযহার ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে রাজধানী থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দুই বহির্গমন পয়েন্ট— বঙ্গবন্ধু ও পদ্মা সেতুতে শনিবার (১৫ জুন) অনেকটা বিপরীত পরিস্থিতি দেখা গেছে।
গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দুর্ঘটনা, টোল আদায় বন্ধ, চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ছিল। বেলা ১১টার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও টোল প্লাজায় ছিল পরিবহনের ধীরগতি। অন্যদিকে, পদ্মাসেতুতে যান চলাচল ছিল নির্বিঘ্ন ও ঝামেলামুক্ত।
তবে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন দুপুরের পর থেকে যানবাহন কমতে থাকে। বেলা তিনটার পরে যানজটমুক্ত হয় সড়ক ও সেতু এলাকা।
শনিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একজন ফটোগ্রাফার সরেজমিন গিয়ে, দুপুরের আগের টোল প্লাজায় যানবাহনের চাপ দেখতে পান, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের। সেতুতে বাইকের টোল আদায় করা হয় এক লেনে। পরে সেটাকে দুই লেন করা হয়। এতে অল্প সময়ের মধ্যে চাপ কমে যায়। বিকাল নাগাদ আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে যান চলাচল।
শনিবার ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে যানবাহনের জটলা বা যাত্রীদের কোনো বিড়ম্বনা দেখা যায়নি। নির্বিঘ্নে ওই মহাসড়ক হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছে যানবাহনগুলো।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণবঙ্গ অভিমুখের টোল প্লাজায় ৭টি বুথে নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায় করা হচ্ছিল। টোল আদায়ে প্রতি গাড়িতে সময় নিচ্ছিল মাত্র ৫-৬ সেকেন্ড।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জিয়াউল হায়দার জানান, শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। শনিবার ভোর থেকে এই পথে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিবিঘ্নে গন্তব্যে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। বিকালেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
তিনি জানান, "রাতে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ওয়েটস্কেলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখায় শুক্রবার ভোরে মহাসড়কে যানবাহনে জটলা দেখা দেয়। এতে প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল যানবাহনের ধীরগতি।"
মাওয়া প্রান্তের টোল টোল ম্যানেজার আহমদ আলী জানান, ঈদের আগে শেষ কর্ম দিবস শেষে বৃহস্পতিবার একযোগে গার্মেন্টসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ছুটি শুরু হওয়ায়, স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায়।
তিনি বলেন, "তবে ৭টি টোল বুথে গড়ে প্রতি তিন সেকেন্ডে এক একটি যানবাহনের টোল আদায় করা হয়েছে, এতে পর্যায়ক্রমে নির্বিঘ্নে টোল দিয়ে সেতু অতিক্রম করতে পেরেছে সব ধরনের যানবাহন।"
অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশে জানিয়েছে, রাতে ও ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ঘটায় সেতুর ওপর চাপ কমাতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে, চালকদের ওভারটেকিং প্রতিযোগিতার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। যেটা বেলা ১১টার পর্যন্ত ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা হতে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত পরিবহনের ধীরগতি আছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, ভোর রাতে যানবাহন বিকল ও টোল প্লাজা কয়েকবার বন্ধ থাকার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, "বঙ্গবন্ধু সেতুতে গাড়ি নষ্ট হওয়া বা দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া নতুন কিছু না। এরজন্য খুব বেগ পেতে হয়। বিকল হওয়া গাড়িটি সরিয়ে মেরামত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। এই সময়ে সেখানে যানজট তৈরি হয়।"
"এছাড়া, অন্যান্য সড়কেও গাড়ি বিকল হলে, অন্য যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে এবার তার মাত্রাটা অনেক কম ছিল। আমরাও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না," যোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের মতোই যানবাহন চলাচল করছিল। ওই পথে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ছিল না।
দূরপাল্লার গণপরিবহনের পাশাপাশি এই মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন।
ফলে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু নির্বিঘ্নে পাড়ি হচ্ছিল যানবাহনগুলো।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান আরও বলেন, "টোল প্লাজাগুলোতেও কোনো সমস্যা নেই। আসলে তারা ৫ মিনিটে প্রায় ১০০ গাড়ির টোল নিতে পারে। কিন্তু যখন একবারে কয়েকশো গাড়ি চলে আসে, তখন যানবাহন ধীরগতিতে আগাতে হচ্ছে। এটা খুব বড় কোনো সমস্যা হিসেবে দেখছি না।"
টোল প্লাজা ছাড়াও শনিবার বিভিন্ন মহাসড়কেও ছিল ধীরগতি। কখনও কখনও কোনো কোনো জায়গায় লেগেছিল জ্যামও।
এদিন বেশিরভাগ গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় গাজীপুরের দুই মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড় হয়। গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। এখানে যানবাহন চলছিল থেমে থেমে।
এক চালক বলেন, "আজকে বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট ছুটি দিছে। তাই বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা সড়কে নেমেছে। এ কারণে যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম। অনেক জায়গায় যাত্রীরা সড়কে দাড়ানোর কারণে গাড়ি চলে আস্তে আস্তে। এ কারণে সড়কে গাড়ির গতি কম।"
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, "শনিবার অনেকগুলো কারখানা একযোগে ছুটি হওয়ায় বিকালে সড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। অনেক স্থানে যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম ছিল। এ কারণে যাত্রীদের কোথাও কোথাও দীর্ঘ সময় গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এসব কারণে কোথাও সাময়িক গাড়ির গতি কম থাকলেও যান চলাচলে কোথাও যানজট হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে মানুষ এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবে।"
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খানের মতে, "গতকাল ও আজ ছিল ঈদযাত্রার পিকডে। আজ সেটি বেশি কারণ আজ ৬০ শতাংশ গার্মেন্ট আজ ছুটি দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ একসাথে বেরিয়ে পড়ায় নবীনগর, গাজীপুর ও চন্দ্রার সড়কে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। এতে চলাচলে যানবাহনে ধীরগতির সৃষ্টি হয়।"
"এছাড়া, মহাসড়কে কোথাও কোথাও ধীরগতি ও মাঝে মাঝে সামান্য জটের সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু সেটি খুব বেশি নয়, ফলে তেমন ভোগান্তি নেই। এবারের ঈদযাত্রা মোটামুটি অনেকটাই নির্বিঘ্নে কাটছে," বলেন তিনি।