ওষুধি গাছ ব্যবহার করে নিজের ক্ষত সারাতে পারে শিম্পাঞ্জি: গবেষণা
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, বন্য শিম্পাঞ্জিরা নিজেদের ক্ষত নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (জীবাণুরোধী) এবং ব্যথা উপশমকারী বৈশিষ্ট্যযুক্ত গাছপালা খায়।
তারা উগান্ডার বনে আহত এবং অসুস্থ শিম্পাঞ্জিদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সময় দেখতে পান, প্রাণীগুলো নিজেদের অসুস্থতা কিংবা বিভিন্ন রকমের শারীরিক ক্ষত নিরাময়ের জন্য নির্দিষ্ট গাছপালা খেয়ে থাকে। একটি আহত শিম্পাঞ্জি একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ খাওয়ার পর গবেষকরা এটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখতে পান, ব্যবহৃত গাছটির জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য ছিল।
পএলওস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, শিম্পাঞ্জিরা নতুন ওষুধের সন্ধান করতেও সাহায্য করতে পারে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রধান গবেষক ড. এলোডি ফ্রেইম্যান বলেন, "আমাদের পক্ষে এই বনের প্রতিটি গাছের ঔষধি গুণের পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই আমরা ইতোমধ্যেই যে গাছপালাগুলো শিম্পাঞ্জিরা ব্যবহার করছে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখব না কেন?"
বিগত চার বছরে ড. ফ্রেইম্যান বুডংগো সেন্ট্রাল ফরেস্ট রিজার্ভে বন্য শিম্পাঞ্জির দুটি দলকে অনুসরণ করে কয়েক মাস সময় কাটিয়েছেন। শিম্পাঞ্জিগুলোর ব্যথার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি, স্বাস্থ্য নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীগুলোর পঙ্গুত্ব বা শরীরের অস্বাভাবিক নড়াচড়ার মতো বিষয় খুঁজে বের করার জন্য তিনি এবং তার দল ড্রপিং এবং প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করেন। আহত বা অসুস্থ শিম্পাঞ্জি যখন গাছের ছাল বা ফলের চামড়ার মতো অস্বাভাবিক খাবার খায় তখন তারা বিশেষভাবে সেটি পর্যবেক্ষণ করেন।
ড. ফ্রেইম্যান বলেন, "আমরা এই আচরণগত সংকেতগুলো খুঁজছিলাম যা দেখে ধারণা করতে পারি ঐ উদ্ভিদের ঔষধি গুণাবলি থাকতে পারে।"
তিনি একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জির উদাহরণ দেন যেটির হাতে বাজে ক্ষত ছিল। তিনি জানিয়েছেন, আহত হাতের জন্য প্রাণীটির চলাচলে সমস্যা হতো। দলের বাকিরা খাওয়ার সময় আহত শিম্পাঞ্জিটিই একমাত্র বিভিন্ন ফার্নের সন্ধান করত। বিজ্ঞানীরা ফার্নটি সংগ্রহ করার পর সেটির গবেষণা চালায়। ক্রিস্টেলা প্যারাসিটিকা নামে পরিচিত ফার্নটি বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পান, এটির ব্যথা উপশম করার ক্ষমতা অনেক বেশি।
তারা ১৩টি উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে মোট ১৭টি নমুনা সংগ্রহ করার পর জার্মানির নিউব্র্যান্ডেনবার্গ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সাইন্সের ড. ফ্যাবিয়ান শুল্টজকে দিয়ে পরীক্ষা করান। পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ উদ্ভিদের নির্যাস ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং এর এক-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিকভাবে ব্যথার উপশম করে অর্থাৎ ব্যথা কমাতে এবং নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
ড. ফ্রেইম্যান জানিয়েছেন, গবেষণার জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা সবগুলো আহত এবং অসুস্থ শিম্পাঞ্জি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন, যে শিম্পাঞ্জিটি ব্যথা দূর করতে ফার্ন খেয়েছিল সেটি কয়েক দিনের মধ্যে আবার সেটির হাত ঠিকঠাক ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেছেন, "তবে আমরা শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারবো না যে শিম্পাঞ্জিগুলোর ভালো হওয়ার জন্য তারা যে গাছগুলো খেয়েছে সেগুলোর অবদানই সবথেকে বেশী।"
গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, "একটি বন্য প্রজাতিকে পর্যবেক্ষণ করে আমরা যে মূল্যবান ঔষধি জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি সেটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে 'ওষুধি গাছের বন' সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহী করবে।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়