বাবা মক্কায় সমাহিত হয়েছেন: হজে তীব্র গরমে মৃত্যুবরণ করা ইন্দোনেশিয়ান বৃদ্ধের পরিবার
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/25/screenshot_2024-06-25_125409.png)
চলতি বছর হজে কমপক্ষে ১ হাজার ৩০১ জন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সৌদি আরব সরকার। এই মৃতদের অধিকাংশই অনিবন্ধিত হাজি যারা প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই দীর্ঘ দূরত্ব পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন।
এক্ষেত্রে অন্যসব পরিবারের মতো বয়স্ক এক ইন্দোনেশিয়ান মৃত ব্যক্তির পরিবারের মাঝেও শোকের ছাড়া নেমে এসেছে। তবে ঐ মৃত ব্যক্তিতে পবিত্র শহর মক্কায় সমাহিত করায় তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিল। যাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখই ছিল বিদেশি। এরমধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়ারই অন্তত ২১৫ জন মানুষ নিহত হয়েছে।
গত রবিবার সিএনএন-এর সাথে কথা বলার সময় হেরু জুমারতিয়াহ নামের এক ইন্দোনেশিয়ান জানান, তার ৮৬ বছর বয়সী বাবা এনগাতিজো ওংসো সেন্টোনো গত ১৭ জুন মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে মিনায় মারা যান।
জুমারতিয়াহ বলেন, "আমার বাবা ঘুমিয়েছিলেন এবং এর আগে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ ছিল না। সবাই জানিয়েছিল যে, হজযাত্রায় সে সুস্থ ছিলেন।"
সেন্টোনো ২০১৮ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। চলতি বছর তিনি তার ৮৩ বছর বয়সী স্ত্রী ও প্রতিবেশীদের সাথে মক্কায় গিয়েছিলেন।
জুমারতিয়াহ বলেন, "আমার বাবা হজে যাওয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। তিনি অবিলম্বে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন।"
জুমারতিয়াহ বলেন, "আমরা খুশি যে তাকে মক্কায় দাফন করা হয়েছে।" একইসাথে তিনি ভবিষ্যতে মক্কায় ভ্রমণ করলে বাবার কবর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/06/25/screenshot_2024-06-25_125611.png)
জুমারতিয়াহ জানান, হজে যাওয়া তার মা সুস্থ আছেন এবং ৭ জুলাই ইন্দোনেশিয়ায় ফিরবেন।
চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে মোট ২ লাখ ৪১ হাজার জন হজ পালন করতে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করাদের বেশিরভাগই বয়স ৫০ বছর বয়সের বেশি। গত বছরও প্রায় ৭৭৩ জন ইন্দোনেশিয়ান হজে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরমে হজযাত্রীদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ওষুধ বা মৌলিক সুবিধা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হজ থেকে ফিরে বেশ কয়েকজন তীর্থযাত্রী সিএনএনকে এমনটাই জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় তীর্থযাত্রীদের জ্ঞান হারানো ছিল অহরহ ঘটনা। এছাড়াও অনেকেই হেঁটে যাওয়ার সময় সাদা কাপড়ে মানুষকে ঢেকে রাখার মতো ভয়ানক দৃশ্য দেখেছে।
৪০ বছর বয়সি জিরার আলী গত শুক্রবার তার ৭০ বছর বয়সী বাবার সাথে হজ পালন শেষে লন্ডনে পৌঁছেছেন। তিনি সিএনএনকে জানান, হজ কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদের পর্যাপ্ত পানি, ছায়া ও চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
প্রায়শই মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে আলী বলেন, "আমার কাছে মনে হয়েছিল যে, সেখানে লোকের তুলনায় পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। শারীরিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হলেই কেবল তাদের পাওয়া গিয়েছে। মানুষগুলোর কষ্ট দেখে আমি আমার হজে মনোযোগ দিতে পারিনি।"
আলীর মতো একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ৪৪ বছর বয়সী হজযাত্রী আহমেদ। তিনি অনেক লোককে অসুস্থ হতে এবং এমনকি গরমে মারা যেতে দেখেছেন বলেন জানান।
তিনি বলেন, "আমি অনেক তীর্থযাত্রীকে দেখেছি যারা মারা গেছে। প্রায় প্রতি কয়েকশ মিটারে (সাদা কাপড়ে ঢাকা) লাশ পড়ে ছিল।"
স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা কোনো অ্যাম্বুলেন্স না দেখার কথা জানিয়ে আহমেদ আরও বলেন, "স্থানীয় বাসিন্দা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছ থেকে আসা পানি দ্রুতই ফুরিয়ে আসছিল।"
এক্ষেত্রে উভয় তীর্থযাত্রী চলতি বছরের হজ চলাকালীন দুর্বল অবকাঠামো ও অব্যবস্থাপনার কথা জানান। বিশেষত যারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্যুর গ্রুপের বাইরে নিজ থেকে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য দুর্ভোগ যেন আরও বেশি ছিল।
এদিকে হজ উপলক্ষ্যে সৌদি কর্মকর্তারা তীর্থযাত্রীদের ছাতা ব্যবহার ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একইসাথে দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে সূর্যের সংস্পর্শ এড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। তবে আরাফাত ময়দানে অনুষ্ঠিত প্রার্থনাসহ হজের বেশকিছু আচার-অনুষ্ঠান দিনের বেলায় বাইরে থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পালন করতে হয়।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান