পণ্যের কায়িক পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই ঢাকা বিমানবন্দরের নতুন কার্গো টার্মিনালে, রাজস্বহানির শঙ্কা
ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় নতুন কার্গো টার্মিনালে আমদানি বা রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও, পণ্যের 'ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন' বা কায়িক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে রাজস্বহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় রাজস্বের সঙ্গে যুক্ত অনেক বাণিজ্যিক ও স্পর্শকাতর পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কায়িক পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না। আবার গোপন সংবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো চালানের (কনসাইনমেন্ট) বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হলেও পণ্যের 'ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন' করা যাবে না। ফলে সঠিকভাবে আমদানি কর আদায়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে 'অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ' বলে মনে করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।
অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানকে ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও উত্তর দেননি তিনি।
এদিকে, প্রকল্প পরিচালক (তৃতীয় টার্মিনাল) একেএম মাকসুদুল ইসলামও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন আমদানি কার্গো টার্মিনাল ভবন অবকাঠামো ও লজিস্টিকস বিষয়ে পর্যালোচনার লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা কাস্টমস হাউজ।
ওই কমিটি গত ২৫ মার্চ তারিখে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়; তাতে আলোচ্য বিষয়সহ নির্মাণাধীন আমদানি কার্গো ভবন চালু করার ক্ষেত্রে অন্তত ৬টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে।
এরমধ্যে আমদানির তুলনায় নতুন ভবনে পণ্য সংরক্ষণে পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনের জন্য ইয়ার্ড না থাকা, অটোমেটেড স্টোরেজ ও রিট্রাইভাল সিস্টেম (এএসএসআর) না থাকা ছাড়াও জনবল ও অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তার অনুপস্থিতির বিষয় উঠে এসেছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের পর্যালোচনায় যেসব চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে, তা এনবিআর ও বেবিচকের কাছে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।"
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, "বর্তমানে দেশের সব কাস্টমস হাউজে পণ্য স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা থাকার পাশপাশি ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। থার্ড টার্মিনালের ডিজাইনে পণ্য স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু আমদানির ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল গুডস ও সন্দেহযুক্ত পণ্যের ফিজিক্যাল এক্সামিন করতে হয়, যাতে মিস ডিক্লারেশন কন্ট্রোল করা যায়।"
"আবার অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য দিনে দিনে ক্লিয়ার করা যায় না বিভিন্ন কারণে। ওইসব আমদানিকৃত পণ্যের চালান দীর্ঘ সময় রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই সেখানে। এই টার্মিনাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাস্তবতা হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি," যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এনবিআর পরিচালিত টাইম রিলিজ স্টাডি রিপোর্ট অনুসারে, আমদানি করা পণ্য ছাড়ের জন্য গড়ে ৮ দিন সময় নেয় ঢাকা কাস্টমস হাউজ।
কাস্টমসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্যের কায়িক পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে, তা সঠিক রাজস্ব আহরণের জন্য 'অত্যন্ত ঝঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "এই টার্মিনালের ডিজাইন করেছে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাপান ও কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বিষয়ে তারা ভলো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।"