বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক বোর্ড
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, নভেম্বরের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আমেরিকান গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার খামখেয়ালি এবং স্বার্থান্বেষী আচরণের কারণে গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি।
তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন এবং তার সমর্থকরা ২০২৫ সালের যেসব পরিকল্পনার কথা বলেছেন তা তাকে তার চরমপন্থি ধারণাগুলো বাস্তবায়নের জন্য আরও ক্ষমতা দেবে। পুনঃনির্বাচিত হলে তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতার স্বাভাবিক সীমাবদ্ধতা অগ্রাহ্য করে একতরফা কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবেন।
বাইডেন যুক্তি দেখিয়েছেন, এই হুমকি মোকাবিলা এবং রিপাবলিকানদের পরাজিত করার জন্য তিনিই সেরা প্রার্থী, কারণ তিনি ২০২০ সালে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন। তবে এ বছর বাইডেনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার পক্ষে এটি আর যথেষ্ট শক্তিশালী কারণ নয়।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর বাইডেনের আর নির্বাচনী দৌড়ে থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে বিভক্ত খোদ ডেমোক্র্যাটরা।
বিতর্কে যুক্তিতর্কে ট্রাম্পের কাছে বেশ কয়েকবারই খেই হারিয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্পের মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক কথাবার্তার দৃঢ় কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে অর্জনের খাতা কী দিয়ে ভারী করবেন বলতে পারেননি তা-ও। বাইডেনের দুর্বল, টলমল বিতর্কে হতাশ হয়েছেন নিজ দলের সদস্যরা।
বিতর্কের আগে অনেক মার্কিনি জো বাইডেনের বয়স ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিতর্ক শেষেও সে উদ্বেগ আরও জোরালো হয়েছে। কথা বলার সময় বাইডেনকে অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল, তিনি অস্পষ্টভাবে কথা বলছিলেন এবং মাঝে মাঝে বিড়বিড় করছিলেন।
ট্রাম্প তো অনুষ্ঠানের মাঝেই খোঁচা মেরে বলেন, 'উনি কী বলেছেন আমি কিছুই বুঝি নি, এবং আমি নিশ্চিত উনি নিজেও বুঝেননি।'
চলতে মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশ্য খারাপ ছিলেন না বাইডেন। ট্রাম্প প্রশাসনের করে যাওয়া ক্ষতিগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু বাইডেন এখন সবথেকে বড় যে জনসেবা করতে পারেন তা হলো, ঘোষণা দেয়া যে তিনি পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই নির্বাচন অনেকখানি ঝুঁকি নিয়েই খেলছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। অন্যান্য ডেমোক্র্যাটিক নেতারা ট্রাম্পের বিপরীতে প্রেসিডেন্সির জন্য স্পষ্ট, শক্তিশালী এবং শক্তিশালী বিকল্প প্রস্তাব করতে এক পায়ে খাঁড়া।
ট্রাম্প এবং বাইডেন দুজনেরই দুর্বলতার জায়গা থাকলেও ভোটারদেরকে যেকোনো একদিকে আপস করতে হবে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উচিত হবে না ভোটারদের এভাবে দোটানায় ফেলে দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলা। আমেরিকানরা বাইডেনের বয়স এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো উপেক্ষা করবে বা অবজ্ঞা করবে এমন আশা করাও হবে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ও বোকামি।
কিন্তু তাও যদি এই নির্বাচন ট্রাম্প এবং বাইডেনের মধ্যে হয়, তবে এই বোর্ড দ্ব্যর্থহীনভাবে বাইডেনকেই বেছে নেবে—ট্রাম্প যে বড় হুমকি এটি তাই প্রমাণ করে। তবে বোর্ড এটাও মনে করে, ট্রাম্পকে মোকাবিলা করার জন্য বাইডেনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী প্রার্থী দরকার।
প্রচারাভিযানের এই শেষের দিকে নতুন ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী আহ্বান করা সহজ সিদ্ধান্ত নয়, তবে এই চাওয়া— যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ এবং প্রশাসনিক কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর ট্রাম্প এবং তার মুখোমুখি হওয়ার জন্য অপ্রতুল বাইডেনের বিকল্প যে দরকার এই ধারণাকেই প্রতিফলিত করে।
তবে বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে খুব সহজে সরে দাঁড়াবেন না, কারণ তিনি সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এসেছেন। তার সমর্থকরা বলছেন, তার তিন বছরের অর্জনের তুলনায় এই বিতর্ক একটি খারাপ রাত বৈকি আর কিছুই না। তবে বিতর্কে তার খারাপ পারফরম্যান্স তার সামর্থ্য সম্পর্কে চলমান উদ্বেগকে আরও জোরদার করেছে।
ট্রাম্পের সাথে এ বিতর্ক বাইডেন নিজেই চেয়েছিলেন। এজন্য নির্বাচনের অনেক আগেই বিতর্কের দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারণ করেন তিনি। তিনি যে মানসিকভাবে এখনও তীক্ষ্ণ তা তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন। তবে বিতর্কে ভালো করতে না পারায় নিজের পরীক্ষায় ব্যর্থ তিনি।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভোটাররা চান নতুন কোনো নেতা ট্রাম্পকে মোকাবিলা করুক। এখনও সময় আছে বাইডেন ও তার সমর্থকদের ভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার।
কিন্তু বিতর্কের পর রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে যথেষ্ট প্রশ্ন করছেন না। ট্রাম্পের পারফরম্যান্সের হিসেবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত- তিনি নিজের সম্পর্কে, তার প্রেসিডেন্সি সম্পর্কে এবং তার প্রতিপক্ষ সম্পর্কে অনেক মিথ্যা বলেছেন। তিনি এমন পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন যা অর্থনীতির ক্ষতি করবে, নাগরিক অধিকারকে দুর্বল করবে এবং অন্যান্য দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
পরাজয় মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিবর্তে তিনি একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছিলেন যা ৬ জানুয়ারি ক্যাপিট্যাল হিলে কংগ্রেসের ওপর আক্রমণের দিকে পরিচালিত করেছিল।
রিপাবলিকান পার্টি এখন ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে অবশ্যই এক ব্যক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
যেসব ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন, তাদের এখন সৎ হতে হবে। তাদের এখন উচিত বাইডেনকে সত্যিটা জানানো। বাইডেনের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের এখন মেনে নিতে হবে যে প্রেসিডেন্টের খ্যাতিতে ভাটা পড়েছে এবং এটি সহজে আর ঠিক করা সম্ভব হবে না।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন