নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বাইডেনের স্থান নিতে পারেন যে ৭ ডেমোক্র্যাট
নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম মুখোমুখিতে ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বাইডেন। যুক্তিতর্কে ট্রাম্পকে হারাতে না পারায় আতঙ্কিত ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যে ৮১ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম 'সিএনএন'-এ বাইডেনের বাজে বিতর্ক শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপস্থাপকরা প্রকাশ্যে বাইডেনের জায়গায় অন্য প্রার্থীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের ৯০ মিনিটের বিতর্কের পরপরই তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অ্যাক্সেলরড সিএনএনকে বলেন, 'তিনি যেভাবে বিতর্ক শুরু করলেন তাতে হতবাকই হয়েছি। তার নির্বাচন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে কিনা তা নিয়ে এখন আলোচনা হবে'।
প্রার্থীদের প্রথম বিতর্কের আগে থেকেই অনেক মার্কিনি বাইডেনের বয়স ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই ঘটনার পর যা আরও গভীর হয়েছে। ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে থেকেই বাইডেনকে বাদ দেওয়ার আহ্বান শোনা যাচ্ছে। তবে বাইডেনের সম্মতি ছাড়া সেটি করা খুবই কঠিন।
প্রভাবশালী যেসব ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা এর আগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাইডেনের প্রার্থিতাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, এখন তারাই দলের মধ্য থেকে বিকল্প প্রার্থীর আবেদন খুঁজছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ক অনুষ্ঠানে বাইডেন যে শোচনীয় পারফর্ম করেছেন, তাতেই আস্থায় তাদের চিড় ধরেছে। ফলে সংকটকালীন বিকল্প হিসেবে, তারা এমন প্রার্থী চাইছেন, ভোটারদের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।
ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, দলের অন্য নেতারা বাইডেনকে প্রার্থীতা থেকে বাদ দিতে পারে এমন কোনো নিয়ম নেই। তারা কাউকে বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত করতে হলে তা কনভেনশন ফ্লোরে মনোনয়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার মাধ্যমে করতে হবে।
এ প্রক্রিয়াটি হলো: প্রথমে বাইডেনকে নিজে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর তার জায়গায় অন্য কাউকে বাছাইয়ে একটি উন্মুক্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এবারের 'প্রাইমারি'তে প্রায় চার হাজার ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বাইডেন। তবে সেসময় যারা বাইডেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেও এই বিতর্কের পর নড়েচড়ে বসেছেন।
তবে তারা যদি বাইডেনকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দিতে চায়, তাহলে কমপক্ষে তাদের অর্ধেককে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে এবং তাকে (বাইডেন) প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
ডেমোক্র্যাটরা চাইলে এই আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে নতুন প্রার্থী বেছে নিতে পারে। তবে বাইডেনের সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বর্তমানে, তিনিই একমাত্র ডেমোক্র্যাট যিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি হতে পারে।
কিন্তু বাইডেন যদি সত্যিই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাইডেনের উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কয়েকজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হলেন:
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস
বাইডেন যদি সরে দাঁড়ান তাহলে তার পরিবর্তে এই তালিকায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয়-আমেরিকান নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, কমলা হ্যারিস এক নম্বরে থাকবেন তা নিশ্চিত বলা যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ভোটাধিকার ও পররাষ্ট্রনীতির মতো ইস্যুতে বাইডেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
তিনি সান ফ্রান্সিসকো জেলা অ্যাটর্নি, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
কমলা হ্যারিস অবশ্য ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে প্রচারণা ভালো করতে পারেনি দেখে, প্রাইমারির আগেই তা শেষ করে দেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস বাইডেনের কাছ থেকে প্রশংসা পেলেও অযথা কর্মী বদল এবং তার অফিসে কর্মহীনতার প্রতিবেদনের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
তার অনুমোদনের রেটিংও কম, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনে তার সম্ভাবনা নিয়ে কিছু ডেমোক্র্যাটকে উদ্বিগ্ন করেছে। এই সমস্যাগুলোর পরেও, তিনি কৃষ্ণাঙ্গ এবং তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছেন, যা তাকে ২০২৪ না হোক ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে রেখেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সান ফ্রান্সিসকোর সাবেক মেয়র ও বর্তমান দেশটির সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তিনি বাইডেনের অন্যতম প্রধান সমর্থক। তবে বিতর্কের পর নিউসম বাইডেনের পুনর্নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ নাকচ করে দিয়ে এ ধরনের কথাবার্তাকে 'অপ্রয়োজনীয়' বলে অভিহিত করেন।
বাইডেনের প্রচারণা শিবিরের প্রতিনিধিত্ব করার সময় গ্যাভিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসিকে বলেন, 'একটি বিতর্কের জন্য আপনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন এটা তো হয় না। কোন দল এমনটা করে?'।
এবার না হলেও পরের বার হয়ত কমলা হ্যারিসের সাথে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতা নিয়ে প্রতিযোগিতা হতে পারে।
মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার
রাজনৈতিক লড়াইয়ে বেশ অভিজ্ঞ মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার, অনেকগুলো জিতেছেনও তিনি। সম্প্রতি মিশিগানে ডেমোক্র্যাটের পারফরমেন্স আশাজনক, ২০২২ সালে আইনসভার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
হুইটমার তার ২০২২ সালের পুনর্নির্বাচনে রিপাবলিকান টিউডর ডিক্সনের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ পয়েন্টে জিতেছিলেন।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিশিগান গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং হুইটমার হবেন বাইডেনের প্রধান সমর্থক। তিনি বাইডেনকে গর্ভপাতের অধিকার সম্পর্কে আরও দৃঢ়ভাবে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন, যা অনেক ভোটার— বিশেষত নারীদের উৎসাহিত করেছে।
বাইডেন প্রার্থী না হলে হুইটমারের মধ্য-পশ্চিমা পটভূমি, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং মধ্যপন্থি আবেদন তাকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে পারে। তবে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে ট্রাম্পের লড়াইয়ে তিনি হবেন নতুন মুখ।
মিনেসোটার সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার
২০০৭ সাল থেকে সিনেটে থাকা সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে তিনি বাইডেন ও সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের থেকে ভালো ফলাফল করেন। তবে, তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনা প্রাইমারিতে পর্যাপ্ত সমর্থন অর্জন করতে না পেরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন।
তারপরও, যদি বাইডেন প্রার্থী না হন, তাহলে ক্লোবুচার শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন। প্রাইমারির সময় তিনি তার জাতীয় প্রোফাইল বাড়িয়েছিলেন এবং মিনেসোটার সিনেটর হিসেবে তার দ্বিপক্ষীয় সাফল্যের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে।
নিউ জার্সির সিনেটর কোরি বুকার
সিনেটর কোরি বুকার ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ওই বছরের জানুয়ারিতে তার প্রচারণা শেষ করেন। প্রাক্তন নেওয়ার্ক মেয়রকে ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রতিযোগী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বুকার দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ২০২৮ সালের প্রচারণা শুরু করতে পারেন, যেখানে তিনি ২০১৯ এবং ২০২০ সালে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের যদি বাইডেন ছাড়া অন্য কাউকে বেছে নিতে হয়, তাহলে বুকারের নাম বিবেচনায় থাকতে পারে।
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার
নর্থ ক্যারোলাইনার বাইরে ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের মধ্যে গভর্নর রয় কুপার খুব একটা বড় নাম নন, অন্তত এখনো না। তিনি একজন সাবেক রাজ্য আইনপ্রণেতা, এক সময়ের নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বর্তমান দুই মেয়াদের গভর্নর।
১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা দক্ষিণের কোনো গভর্নরকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়নি। এ বছর না হলেও ২০২৮ সালে কুপার দলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন।
মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর
সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং রোডস স্কলার, ওয়েস মুর ২০২২ সালে মেরিল্যান্ডের গভর্নর নির্বাচিত হন। শিশু দারিদ্র্য এবং আবাসন সামর্থ্যের মতো সমস্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট অবদান রেখেছেন তিনি।
মুরকে ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তিনি বাইডেন এবং হ্যারিসের শক্তিশালী সমর্থক। রাজনীতিতে নতুন হলেও ডেমোক্রেটিক পার্টিতে তার প্রভাব বাড়ছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন