হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুর খামারে সিমেন্ট শিট ব্যবহারে উৎপাদন বাড়বে: বিশেষজ্ঞরা
হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামারে সিমেন্ট শিট ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রান্তিক লোকসানি খামারগুলো মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি ভোক্তারা কম মূল্যে ডিম, দুধ ও মাংসও খেতে পারবেন।
সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাংলাদেশ সিমেন্ট শিট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'সবুজ নির্মাণ: সিমেন্ট শিট যেভাবে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করছে' শীর্ষক কর্মশালায় তারা এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নথু রাম সরকার।
তিনি বলেন, "বিভিন্ন গবেষণা বলছে অতিরিক্ত হিটের (গরম) কারণে গবাদিপশু ও মুরগি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে উৎপাদন হ্রস পায়। সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি শেড নির্মাণের ফলে তাপ প্রায় ৬-ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করে; ফলে গবাদি পশু ও মুরগির খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি পায়— যা গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খাতে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুহার কমায় এবং ডিম, দুধ, মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।"
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে মোট ১.২৫ লাখ পোল্ট্রি খামার রয়েছে— যার ৩৫ শতাংশ সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি। এতে বছরে ডিমের উৎপাদন প্রায় ১১ শতাংশ বা ২৫৭ কোটি পিস ডিম বেড়েছে। শতভাগ খামারে সিমেন্ট শিট ব্যবহার হলে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি পিস ডিম অতিরিক্ত উৎপাদন হবে— যার বাজার মূল্য প্রায় ৮,৪০০ কোটি টাকা।
এছাড়া, দেশে প্রায় ৪.২৫ লাখ গবাদি পশুর (ডেইরি ও ফ্যাটেনিং) বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য গৃহপালিত গবাদি পশুসহ দেশে মাংসের উৎপাদন বছরে ৮৭.১০ লাখ টন। এসব খামারের প্রায় ১৯ শতাংশ সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি। শতভাগ খামার সিমেন্ট শিট দিয়ে তৈরি করা হলে মাংসের উৎপাদন অতিরিক্ত প্রায় ৬ লাখ টন বাড়বে— যার বাজার মূল্য প্রায় ৩,৯০০ কোটি টাকা।
অ্যাসোসিরেয়শন তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সিমেন্ট শিট সেক্টরে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৫টি সিমেন্ট শিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রায় ৩.৬২ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। যার মধ্যে আনোয়ার সিমেন্ট শিট লিমিটেড সিংহভাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিমেন্ট শিট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মুসাদ্দিক হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে— যা প্রাণিসম্পদ ও কৃষি খাতের জন্য দুশ্চিন্তার। এতে সিমেন্ট শিট বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
"শিটগুলো ৬ স্তরের হওয়ায় অতিরিক্ত গরমের সময় শেডের ভিতরের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে, এতে শেডের ভিতরের পরিবেশ তুলনামূলক শীতল থাকে— যা মুরগি ও গবাদি পশুর হিটস্ট্রোকে মৃত্যু কমায়।"
তিনি আরও বলেন, "এই শিট ব্যবহারে খামার নির্মাণ ব্যয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয়— যা উৎপাদন খরচও কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।"