রূপপুর প্ল্যান্টের জন্য রাশিয়াকে ১৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের টাকা পরিশোধ করলো বাংলাদেশ
গত আড়াই বছর ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারে পেমেন্ট আটকে যাওয়ায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়াকে ১৫ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ টাকার মাধ্যমে প্রদান করেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এই অর্থ দেওয়া হয়েছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুধবার (৩ জুলাই) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান বিরোধের কারণে রুশ ব্যাংকগুলোর ওপরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অর্থপ্রদানের মাধ্যমে পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের সহযোগী সংস্থা অ্যাটমস্ট্রোয়ক্সপোর্ট বাংলাদেশি মুদ্রায় আংশিক পেমেন্ট গ্রহণে রাজি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জুনের প্রথম দিকে প্রক্রিয়াটি অনুমোদনের পর, পেমেন্টের একটি অংশ টাকায় রূপান্তর করে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহেদুল হাসান টিবিএসকে বলেন, "এই অর্থ স্থানীয় সাবকন্ট্রাক্টিং কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দুটি ১,২০০ মেগাওয়াট ইউনিট নির্মাণ করবে অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট— যারমধ্যে প্রথম ইউনিটটির কাজ প্রায় শেষের দিকে।"
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নিয়মিত অর্থপ্রদান বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতিও থেমে গিয়েছিল। ফলে প্রকল্পের নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়ন নিশ্চিত করতে অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট স্থানীয় মুদ্রায় আংশিক পেমেন্ট নিতে সম্মত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের গতি ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — বর্তমানে এর কাজ ৭৮.১৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে; এই পরীক্ষা সফল হলে আগামী বছর কেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুসারে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তির মূল্য ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্কের ৯০ শতাংশ (১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার) একটি ঋণচুক্তির আওতায় রুশ সরকারের কাছ থেকে আসবে এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ (১.২৬৫ বিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ সরকার অগ্রিম প্রদান করবে।
চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে— ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিবছর চার কিস্তি করে মোট ৩২ কিস্তিতে ১.২৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করা হবে। চুক্তির অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২টি কিস্তিতে ১.০৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা পাকিস্তান আমল থেকে হয়ে আসলেও এটি আলোর মুখ দেখে স্বাধীনতার পরে। নির্মাণের প্রথম পর্যায় শুরু হয় ২০১৩ সালে; পরবর্তীতে ২০১৭ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটিতে রাশিয়ার ৩+ ভিভিইআর ১২০০ চুল্লি ব্যবহার করা হচ্ছে; বর্তমান বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
টাকায় পেমেন্টের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। যার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের নির্মাণকাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।