কোটাবিরোধী আন্দোলন: ৬ ঘণ্টা পর অবরোধ শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা
টানা চতুর্থদিনের মতো বিক্ষোভ ও অবরোধ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) অবরোধ শেষ করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাহিদ ইসলাম রাজধানীর শাহবাগে নতুন একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল শুক্রবার (৫ জুলাই) কোটা বাতিলে পক্ষে অনলাইন ও অফলাইনে প্রচারণা চালানো এবং পরদিন শনিবার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ সমাবেশ।
শনিবারের সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তবে আগামী রোববারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখবেন তারা।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সার্কুলার পুনর্বহালের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।
এদিন বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা ও রাজশাহী রুটসহ প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ অবরোধ করেন।
বিকাল ৫টার দিকে শতাধিক পুলিশ সদস্য রাস্তায় অবস্থান নিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তজেনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা একত্রিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে এ সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে অন্যদের নিবৃত্ত করতে দেখা যায়।
হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, রিট আবেদনকারীর পক্ষে সময়ের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ আজ 'নট টুডে' [আজ নয়] বলে আদেশ দেন।
এ সময় পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর কোটা নিয়ে নিয়মিত আপিল করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করে সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করা যায় কি না — এমন প্রশ্নও তোলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেওয়ার পর থেকেই সেটি সমালোচনার শিকার হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীকালে রায় স্থগিত চেয়ে ৯ জুন আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো: '২০১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।'
তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।