সরকারি কর্মচারীদের গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ; চলতি অর্থবছরেও ব্যয়সাশ্রয়ের পথে সরকার
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থায় গত কয়েক বছরের মতো চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও ব্যয়সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি নিয়েছে সরকার। এর আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া চলতি অর্থবছরে কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। এমনকি পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। পরিচালন বাজেটে সব ধরনের থোক ব্যয়ও বন্ধ থাকবে।
একইসঙ্গে আরও বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ পরিপত্র জারি করে এসব নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ১ জুলাই সোমবার থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য বিদেশ যাওয়া যাবে।
এছাড়া বাধা থাকবে না অন্যান্য দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশযাত্রা।
সেই সঙ্গে প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির এ বছরের ২ জানুয়ারি জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
তবে একান্ত অপরিহার্য হলে পিএসআই বা এফএটির আওতায় বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
পরিপত্রে যে-সব নির্দেশনা রয়েছে
পরিপত্রে সব ধরনের গাড়ি, জাহাজ ও বিমান কেনা বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হলেও পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে অর্থ ব্যয় করা যাবে।
গত অর্থবছরেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গাড়ি কেনা নিষিদ্ধ থাকলেও জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
চলতি অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ হতে ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে 'বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা' খাতে জিওবি (সরকারি অর্থায়ন) বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে 'থোক বরাদ্দ' হিসেবে সংরক্ষিত জিওবি'র সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন, স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে থাকলে অর্থবিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
পরিচালন বাজেটে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ বন্ধের কথা বলা হলেও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এ খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করে অর্থ বিভাগের পূর্ব-অনুমতি নিয়ে ব্যয় করা যাবে। উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়
২০২২–২৩ অর্থবছরে কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতির কারণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। তবে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কত সাশ্রয় হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসেব জানা এখনো সম্ভব হয়নি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকেই সরকার কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতি অনুসরণ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট শুরু হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অধিক হারে কমতে থাকায় কৃচ্ছ্রতা সাধনে আরেকটু কঠোর হয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতানীতি থেকে সরে আসে সরকার।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির প্রেক্ষিতে এবং অগ্রাধিকার খাতে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শেয়ার ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ খাতে ১৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাস করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সীমিত আকারে কৃচ্ছ্রতাসাধন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। তবে সরকার ধীরে ধীরে কৃচ্ছ্রতাসাধন থেকে বের হবে বলেও উল্লেখ করেন।