অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছিলেন তিনি, এখন তার মুক্তিতে খুশি
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত হওয়ায় খুশি সুইডিশ মানবাধিকারকর্মী আনা আরডিন। ১৪ বছর আগে যে দুই নারী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন আরডিন তাদের মধ্যে একজন। অবশ্য এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন অ্যাসাঞ্জ। খবর বিবিসি'র।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির খবরে খুশি হয়েছেন বলে জানান আনা। উইকিলিকসে অ্যাসাঞ্জের কাজের জন্য গর্বিত জানিয়ে আনা আরডিন বলেন, উইকিলিকসে কাজের জন্য অ্যাসাঞ্জকে জেলে পাঠানো উচিত হয়নি।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসাঞ্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল সুইডেনের কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে ২০১২ সালে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা ছিল যে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হলে, সেখানকার সরকার তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে পারে। অ্যাসাঞ্জ সাত বছর ধরে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে এবং তাঁকে প্রত্যর্পণের আবেদন বাতিল করে।
৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের গোপন তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের যেসব গোপন তথ্য উইকিলিকস প্রকাশ করেছে, তা মানুষের জীবন বিপন্ন করার জন্য দায়ী।
এ অভিযোগে গত পাঁচ বছর ব্রিটিশ কারাগারে কাটিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। এই পুরোটা সময়জুড়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির অংশীদার সিবিএস আগেই জানিয়েছিল, চুক্তি মোতাবেক দোষ স্বীকারের পর অ্যাসাঞ্জকে আর মার্কিন কারাগারে সময় কাটাতে হবে না। কারণ এই অভিযোগে ইতোমধ্যেই তিনি লন্ডনের কারাগারে ৫ বছর বন্দি থেকেছেন। এই ৫ বছর কারাবন্দি থাকার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনায় নিয়ে, দোষ স্বীকারের পর তাকে মুক্তি দিয়েছে।
অ্যাসেঞ্জের মুক্তি নিয়ে আনা বলেন, 'আমাদের নামে যে যুদ্ধ হয় তা জানার অধিকার আমাদের রয়েছে। আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে খুশি যে তারা আবার এক হতে পেরেছে। তিনি যে শাস্তি পেয়েছেন তা খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ'।
স্টকহোম থেকে ভিডিও কলিং অ্যাপ জুমে কথা বলার সময় আনা বলেন, তিনি অ্যাসাঞ্জকে দুটি পৃথক দৃষ্টিতে দেখেন—একজন দূরদর্শী কর্মী হিসেবে এবং অপরদিকে নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে।
অ্যাসেঞ্জকে নায়ক নাকি খলনায়ক হিসেবে সম্বোধন করবেন তার উত্তর এড়িয়ে গেলেও তাকে একজন জটিল ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন আনা।
৪৫ বছর বয়সী অ্যাক্টিভিস্ট ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী আরডিন, ক্ষমায় বিশ্বাসী। সাক্ষাৎকারে তিনি বারবার 'সত্য' ও 'স্বচ্ছতার' ওপর জোর দেন। তিনি উইকিলিকসের সাফল্যের প্রশংসা করেন, কিন্তু গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যে নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তা কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করা হয়নি।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন